
শীতল চাচা , আমাকে ক্ষমা কর

মুহম্মদ মফিজুর রহমান: ঠিক বয়স মনে নেই। তবে থ্রি বা ফোরে পড়ি। মাথার চুল বড় হয়ে গেছে। মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাথা ন্যাড়া করে দিবে। কিন্তু আমি কোনভাবেই রাজি নই। কিছুদিন আগে এক সহপাঠী মাথা ন্যাড়া করেছিল, সবাই তাকে টাকবেল বলে ডাকত, সহপাঠীরা হাসা হাসি করত। স্যারও একদিন ক্লাসের মধ্যে মুসকি হেসে ন্যাড়া মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। তাই আর যাই হোক মাথা ন্যাড়া করা যাবেনা। কিন্তু এসব কোন যুক্তিই মানতে নারাজ আমার মা। ন্যাড়া আমাকে হতেই হবে। যদিও শেষ পর্যন্ত আমার কাছে পরাজিত হলেন তিনি, সিদ্ধান্ত হল ন্যাড়া করা যাবেনা।
এরই মধ্যে মামার নির্দেশে বাড়ীতে এলেন শীতল কর্মকার। বাড়ীতে এসে তিনি আমাদের চুল কেটে দেন। আমরা শীতল কাকা বলে ডাকি। খুবই আদর করেন আমাদের। গল্প শোনান আর চুল কাটেন। শান্ত প্রকৃতির শীতল চাচাকে আমরাও খুব পছন্দ করি। কিন্তু একটা রাগ আছে তার উপর। বেচারা খুবই ব্যাকডেটেড, সব সময় ঝোড়া চুল কাটেন, এক্কেবারে আর্মি ছাট। সেই জন্যই তিনি আমাদের পরিবারের মুরব্বিদের খুবই পছন্দের।
চুল কাটতে এসে তিনি বিষয়টি শুনে আমাকে বোঝানোর চেস্টা শুরু করলেন। নিষ্পত্তি হওয়া বিষয় নিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরু হল। একপর্যায়ে চুল কাটার সময় ব্যবহারের জন্য তিনি যে ছোট পিতলের বাটিতে পানি রাখেন, আমি ন্যাড়া হতে রাজি হলে সেটি আমাকে দেওয়ার অফার করলেন। সেটি আমার কী কাজে লাগবে সে বিষয়টি বোঝার কোন জ্ঞান আমার হয়তো ছিলনা, তবে বাটিটা পাওয়ার লোভে আমি ন্যাড়া হতে রাজি হলাম। অতঃপর তিনি হাত থেকে কাঁচি ব্যাগে রেখে খুর বের করে ছোট একটি পাটায় সেটি ঘষতে শুরু করলেন, যেন ধার হয় এবং সহজেই আমার চুলে ভরা মাথা বেলের ন্যায় চকচকে হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আমি যেন ব্যাথা না পাই। মুহুর্তেই আমার মাথাটি তিনি ন্যাড়া করে দিলেন।
পাঠকদের জানিয়ে রাখি, সকালে ঊঠে মক্তবে যাই। হুজুর সুরে সুরে অনেক মজা করে পড়ান। তিনি আমাদের ধর্মীয় অনেক বিষয়ই শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন যে ব্যক্তি কথা দিয়ে কথা রাখেনা তাকে মুনাফিক বলে। যার অবস্থান হবে জানান্নাম।
আবার আগের কথায় আসি। শীতল চাচা সুন্দর করে আমার মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেন, যেভাবে স্যার আমার সহপাঠীর মাথায় হাত বুলিয়েছিলেন। আর কথা বলতে বলতে তিনি বাটি থেকে পানি ফেলে তার ব্যাগে পুরতে লাগলেন। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম , “ এটা না আপনি আমাকে দিবেন ! “ তিনি হেসে দিয়ে বললেন ,” এটা দিয়ে তুই কি করবি ? “
আপনি আমাকে দিবেন না ? আরে বোকা, এটাতো আমার কাজের জিনিস। (বাটিটি ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে ) তুই কী করবি এ দিয়ে? ডান হাত দিয়ে সজোরে চড় বসিয়ে দিলাম শীতল চাচার বাম গালে। মুখে শুধু একটি শব্দ ‘মুনাফিক’ !
স্তব্দ হয়ে গেলেন শীতল চাচা। আর কোন কথা না বলে চলে গেলেন। পাশেই দাঁড়ানো ছিল আমার গর্ভধারীনী। তিনি যেন বেহুশ। কী করল তাঁর একমাত্র আদরের ধন! কী বলে কী করে তিনি এর সংশোধন করবেন ! এতটুকু ছেলে বয়স্ক একজন মানুষের গায়ে হাত দিলো, এটা তাঁর আত্নহত্যার শামিল। লাঠি নিয়ে তেড়ে এলেন। আমিতো ভোদৌড়। কিন্তু কসম করে বসলেন আমার মা, আমাকে ন
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।