‘মহাপ্রাচীর’ ম্যাগাজিনের বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. কিশোর বিশ্বাস
সন্মানিত পাঠকবৃন্দ, বিসিওয়াইএসএ এর ষান্মাসিক ‘মহাপ্রাচীর’ ম্যাগাজিনের সপ্তম সংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারে আমাদের সঙ্গে চীনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন চীনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সর্বজন পরিচিত ড. কিশোর বিশ্বাস। বর্তমানে তিনি চীনের জেজিয়াং প্রদেশের হানঝো শহরের হুয়াওয়ে ট্রেনিং কোম্পানি লিমিটেডে আইটি ট্রেনিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। পূর্বে তিনি চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেইন এক্সপার্ট এডুকেটর এবং বেইজিং হুইজিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেইন এক্সপার্ট লেকচারার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি চীনের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী ও পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি বাংলাদেশে “ও লেভেল” পরীক্ষায় অষ্টম, ১৯৯৭ সালে টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ বক্তা, ২০০৮ সালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সট্রাঅরডিনারি ফরেইন স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ২০১১ সালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সট্রাঅরডিনারি ফরেইন স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। তিনি অনেক চীনা বইয়ের অনুবাদ ও চীনা ও বাংলা অভিধান ও বইয়ের লেখক। চলুন, চীন প্রবাসী ড. কিশোর বিশ্বাসের শিক্ষা, কর্ম ও স্বাভাবিক জীবনাচরণের নানান অভিজ্ঞতা আমরা জেনে আসি।
১। আপনি কেমন আছেন?
ড. কিশোর বিশ্বাসঃ জি আমি ভালো আছি। ধন্যবাদ।
২। আমরা জানি, আপনি চীনে কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক, মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। চীনে কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
ড. কিশোর বিশ্বাসঃ ধন্যবাদ আপনাকে। চীনে দীর্ঘ ১৩ বছরের শিক্ষাজীবনে চীনের শিক্ষা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। জনসংখ্যার বিশালত্বের হিসাবে এখানে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা অনেক। ছোটবেলা থেকেই যারা মূলত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি গণিত বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ ও পারদর্শিতা নিয়ে বেড়ে উঠছে। তার উপর প্রবল প্রতিযোগিতা আর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা বা "কাও খাও" এর চাপ থাকায় এক বিশাল অংশের ছাত্রছাত্রী তাদের সবটুকু মনোযোগ উজাড় করে পড়াশুনা করে। আর এমনি পরিশ্রমী মেধাবী মানুষের সমাহার বেশি ঘটে চীনের নামকরা প্রথম সারির বিদ্যালয় গুলোতে। তাই বিদ্যাপীঠের মূল প্রতিপাদ্য ছাত্র-শিক্ষকরাই যেখানে অনবদ্য, সার্বিক শিক্ষার মান সেখানে ভালো হবে, সেটাই স্বাভাবিক।
আমি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করি যে চীনের একেবারে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়, ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে আমি সেখানে শিক্ষকতা করার সুযোগ পেয়েছি। সারা চীনের আনাচে কানাচে ছেঁচে লাখো কটি মানুষের মাঝ থেকে শিক্ষা ও মেধার অগ্নি পরীক্ষায় সফল হয়ে বাছাই হয়ে আসা তীঘ্ন প্রতিভাধর সহপাঠীদের সাথে একই বেঞ্চে বসে বিজ্ঞান প্রযুক্তি, কম্পিউটার সাইন্সের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পেরেছি। এদের অনেকেই বিশ্বের নামকরা প্রতিযোগিতা, যেমন এ সি এম কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা কিংবা গণিত অলিম্পিয়াডের স্বর্ণ, রৌপ্য বিজয়ী। এই বিদেশ বিভুই-এ চীনা ভাষায় প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণে তাদের অমায়িক বন্ধু-সুলভ সহযোগিতা আর অনুপ্রেরণা আমার শিক্ষাজীবনের পথচলাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।
আর এখানকার শিক্ষকরা যেন সকলের সম্মানের প্রতিমূর্তি। নম্র-বিনয়ী জ্ঞানের আধার শিক্ষক-শিক্ষিকারা এখানে নিজে হাতে গড়ে তোলেন আগামী প্রজন্মকে। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
তবে এখানে প্রথম দুই, তিন বছর চীনা ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে আমার যার পর নেই বেগ পেতে হয়েছে। এর পর থেকে ভাষাটা রপ্ত হয়ে যেতে থাকায় ধীরে ধীরে হালে পানি পাই। তবে কম্পিউটার প্রকৌশলের মতো বিষয় নিয়ে হাতে কলমে এখানকার সহপাঠী শিক্ষকদের সহায়তায় মূল শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করা এবং বিদেশী ছাত্র হিসাবে এখানকার ক্যাম্পাস জীবন সত্যিই এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।