
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান

(১) আমরা আমাদের পারিপার্শ্বিকের দিকে একটু নজর দিলে দেখতে পাবো যে, পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে খুব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার হঠাৎ গায়ে ব্যাথা ভাব বা জ্বর জ্বর অনুভব হচ্ছে অমনি আমরা কাছের কোন ফার্মেসি থেকে ঔষধ এনে খেয়ে নিচ্ছি। বর্তমানে করোনা মহামারী কালীন সময়ে লকডাউনের প্রভাবে যেকোন স্বাস্থ্য পরামর্শের জন্য অনলাইনে আমরা চিকিৎসকের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করছি। শুধু মাত্র সুস্থ থাকার জন্য আজ আমরা হাতের কাছে খুব দ্রুত যে স্বাস্থ্য সেবা গুলো পাচ্ছি তা অতীতে এতোটা সহজ ছিল না।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের আজকের আধুনিকায়ন কিন্তু এক দিনে বা এক বছরেও সম্ভব হয়নি এর অগ্রগতি সম্পূর্ণ হয়েছে ধাপে ধাপে, এখনো বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস অতি প্রাচীন, প্রায় তিন হাজার বছর আগে মিশর, ভারত, গ্রিস ও রোমে চিকিৎসা বিদ্যার বীজ রোপিত হয়েছিলো। এছাড়াও চীনের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। প্রাচীন চীনা চিকিৎসা বিদ্যা মূলত তাওবাদী দর্শনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় অথবা পঞ্চম শতাব্দীতে লিখিত চিকিৎসা শাস্ত্র "হুয়াং দি নিজিং " থেকে হেরাল মেডিসিন, আকুপাংচার, ম্যাসেজ, থেরাপি সহ বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সম্পর্কে জানা যায়।
আগেকার দিনে মানুষ নানা রকম কুসংস্কারের বিশ্বাস করত। রোগীর চিকিৎসার জন্য জাদু টোনা ইত্যাদির আশ্রয় নিতো কিন্তু কালক্রমে মানুষের চিন্তা ধারার বিবর্তনের ফলে আজ মানুষ এই সকল ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে। বিভিন্ন মনীষী ও বিখ্যাত চিকিৎসকের প্রচেষ্টায় রসায়ন শাস্ত্রের উন্নয়ন, প্রাণীবিদ্যার প্রসার, এবং অণুজীববিদ্যা ও জেনেটিক্স বিদ্যার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে যার ফলে মানুষ স্বাস্থ্য সেবার অমূল্য অগ্রগতি সাধন হয়েছে। প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিসের হাত ধরে মানুষের রোগ এবং তার চিকিৎসা সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা বেড়েছে। তিল তিল করে জ্ঞানের পাহাড় গড়ে তুলেছেন কালজয়ী এবং ভুবনবিখ্যাত চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম এক বিজ্ঞানী যার কথা না বললেই নয়! তিনি হলেন মহান দার্শনিক ইবনে সিনা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তিনি বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছিলেন তাঁর লেখা চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ “আল কানুন ফিত তিব্ব” কে দীর্ঘকাল ইউরোপে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত করা বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: মানবদেহের অঙ্গসংস্থান ও শরীরতত্ত্ব সম্বন্ধে তিনি যে সব তথ্য প্রদান করেছিলেন সেগুলো সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত পৃথিবীর সব দেশের চিকিৎসকেরা অনুসরণ করেছিলেন। বলা যায়, শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাঁর কালজয়ী অবদান উল্লেখযোগ্য। প্রথম এ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার, এন্টিবায়োটিকের উৎপত্তি, স্টেথোস্কোপ, কেমোথেরাপি, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট, প্রেসমেকার ইত্যাদি এসেছে কালে কালে, এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে চিকিৎসকের কাজ গুলোকে সহজ করতে এবং সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে কম্পিউটার বিজ্ঞান কে যুক্ত করা হয়েছে। কম্পিউটার বিজ্ঞানের সবচেয়ে আধুনিক এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফল প্রয়োগ স্বাস্থ্য সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞান কে ভবিষ্যতে স্মার্ট মেডিকেল সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (SMST) তে রুপান্তর করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি সেতু হিসেবে কাজ করবে।
BCYSA.ORG
এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ
অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর
ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল :
news.bcysa@outlook.com।