
জিটিআইআরআই গ্লোবাল এন্ট্রেপ্রেনিউরিয়াল ড্রিমার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সাফল্যের দৃষ্টান্ত

১৫ ডিসেম্বর, শিয়ান জিয়াতং-লিভারপুল ইউনিভার্সিটি (XJTLU) এন্ট্রাপ্রেনার কলেজ (তাইচং) ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় জিটিআইআরআই গ্লোবাল এন্টারপ্রেনিউরিয়াল ড্রিমার প্রতিযোগিতার ফাইনাল। এবারের প্রতিযোগিতায় চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২২টি দল অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই প্রতিযোগিতার বৈশ্বিক পরিসর ও অন্তর্ভুক্তির স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।
জিটিআইআরআই
গ্লোবাল এন্টারপ্রেনিউরিয়াল ড্রিমার প্রতিযোগিতা কেবলমাত্র একটি প্রতিযোগিতা নয়; এটি এমন
একটি মঞ্চ যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রকল্পভিত্তিক শেখার বিরল সুযোগ পান। প্রতিযোগিতার
উদ্দেশ্য একটি উদ্ভাবনী শিক্ষা ইকোসিস্টেম তৈরি করা, যা শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং শিল্প
প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উপকারী যোগাযোগের পথ তৈরি করে। এটি শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু ভাবতে
এবং প্রভাবশালী সমাধান তৈরি করতে অনুপ্রাণিত করে।
এ
বছর প্রতিযোগিতার ফাইনালে ছিল তিনটি ট্র্যাক এবং মোট ৬০টি দল।
ট্র্যাক ১—গ্রীন এবং ইন্টেলিজেন্ট প্রযুক্তি
প্রথম পুরস্কার জিতেছে "মাইক্রো-ন্যানো স্যাটেলাইট হাইপারস্পেকট্রাল হাই-অল্টিটিউড অ্যানালাইসিস ফর মেইন ডিসিশন-মেকিং" প্রকল্প।
ট্র্যাক ২—স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সাংস্কৃতিক
প্রযুক্তি
প্রথম পুরস্কার জিতেছে "লিমিটলেস মাইন্ড" প্রকল্প। এই প্রকল্পটি সামাজিক জীবনে শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের যোগাযোগ সমস্যার সমাধানের দিকে মনোযোগ দেয় এবং ইশারা ভাষার ব্যাখ্যা ও সৃজনের মাধ্যমে ডাবল-এন্ডেড অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়ায়। এটি শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের ভাষা দেখতে এবং সক্ষমদের ইশারা ভাষা বুঝতে সাহায্য করে।
ট্র্যাক ৩—ফাইন্যান্স এবং বিজনেস ইনোভেশন
প্রথম পুরস্কার জিতেছে "বিয়ন্ড ক্যাশ অন ডেলিভারি: বিল্ডিং ট্রাস্ট ইন বাংলাদেশের ই-কমার্স
উইথ এআই-পাওয়ারড অর্ডার ভেরিফিকেশন" প্রকল্প।
প্রকল্পটি
শাংহাই বিজনেস স্কুলের কাওসার আহমদ ফাহাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়, যার সাথে ছিলেন
আমির হামজা রোহান, আনোয়ার আফিক (শিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ পোস্টস অ্যান্ড কমিউনিকেশন)
এবং আল মেহেদী হাসান সাজিব (হাংজু ডায়ানজি ইউনিভার্সিটি)। এই প্রজেক্টে বিভিন্নভাবে
তত্ত্বাবধাদন করেছেন, ড. শিয়াও বেই লি সঙকিয়ুনকোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্র্যাকটিস
অধ্যাপক এবং শাংহাই বিজনেস স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক।
এই
প্রকল্পটি বাংলাদেশের ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স শিল্পে ভুয়া অর্ডারের সমস্যা সমাধান
করে। মোবাইল নম্বর যাচাই, ডেলিভারি ডেটা ইন্টিগ্রেশন এবং এআই-চালিত প্রতারণা শনাক্তকরণ
প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি অর্ডার বাতিল এবং ডেলিভারি ব্যর্থতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে
কমায়। এর ফলে ব্যবসায়িক কার্যকারিতা বৃদ্ধি, খরচ সাশ্রয় এবং গ্রাহকদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা
সম্ভব হবে । এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মাধ্যমে, দলটি বিশ্বাস করে যে তাদের সমাধান
শুধুমাত্র ব্যবসাকে সমর্থন করে না বরং সামগ্রিক ডিজিটাল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে
এবং বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলিতে আস্থা বাড়াবে।
কাওসার আহমদ ফাহাদ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে আমাদের প্রকল্পের একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করেছি। যদি যথেষ্ট সমর্থন পাই, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি বাজারে উন্মুক্ত করতে পারব।"
বিশেষ অতিথির বক্তব্য
শিয়ান
জিয়াতং-লিভারপুল ইউনিভার্সিটির প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা অধ্যাপক ঝাং জিয়াওজুন বলেন,
“সৃজনশীলতার উপর ভিত্তি করে প্রতিযোগিতাটি শিক্ষার্থীদের ধারণা তৈরি করার ক্ষমতা বৃদ্ধির
প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। আমরা আশা করি, প্রতিটি ফাইনালিস্ট এই সুযোগটি উপভোগ করবে এবং
একটি অনন্য শেখার অভিজ্ঞতা লাভ করবে।”
ইয়াংজি রিভার ডেল্টা অ্যাডভান্সড মেটেরিয়ালস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উপ-সভাপতি ড. জিয়াং জিয়া বলেন, “উদ্যোগ ও উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা, প্রকৌশল এবং গবেষণামূলক দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করা আমাদের লক্ষ্য।”
আয়োজন ও পৃষ্ঠপোষকতা
এই
প্রতিযোগিতাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে শিয়ান জিয়াতং-লিভারপুল ইউনিভার্সিটি, ইয়াংজি
রিভার ডেল্টা ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইনোভেশন সেন্টার, জিয়াংসু ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি
রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার এক্সেলেন্স ইনোভেশন (শাংহাই)।
এছাড়াও, এটি পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সি'ই পু কলেজ
অফ এন্ট্রাপ্রেনার্স (তাইচং) এবং ইয়াংজি ডেল্টা অ্যাডভান্সড মেটেরিয়ালস রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
Arif/Raoha
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।