চায়নিজ কুসংস্কার | 中国迷信(zhong guo mi xin)
মঈন উদ্দিন হেলালী তৌহিদঃ
চায়নিজ মানুষের নাম শুনলেই আপনার প্রথমেই মাথায় আসে তার কি খায় বা তারা দেখতে কেমন বা তারা কতটা পরিশ্রমী। এছাড়াও অনেকেই চায়নিজদের নাম শুনলেই তাদের ভাষা বা অর্থনীতি নিয়েও ভাবেন হয়তো। চায়নিজদের নিয়ে আমরা সবাই অনেক জানি আবার অনেক কিছু জানি না। চায়নাতে পড়ার সুবাদে চায়নিজদের সাথে মিশেছি অনেক ভালোভাবে। তাই আজ এমন একটা বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি যা আপনি চায়নিজদের সাথে ভালোভাবে না মিশলে জানার কথা না।
তার আগে একটু বলে নি আপনি কি কখনো আপনার পথে কালো বিড়াল হেঁটে গেলে একটু অসস্থি বোধ করেছেন? বা হাত থেকে পড়ে কাছের কিছু ভেঙে গেলে অশুভ বলে মনে করেন? এমনকি ভাঙ্গা আয়না দেখাটা শুভ নয় বলে মনে করেন? আপনি না করলেও এমনকিছু অদ্ভুত জিনিস আপনার আশেপাশে কেউ না কেউ মানে। বাংলাদেশে শহরের তুলনায় গ্রামের লোকজন এসব বেশি মানেন। এসবকে আমরা বলি কুসংস্কার। এসবকে অনেকেই বিশ্বাস করে না অন্তত আমাদের জেনারেশন তো একেবারেই করে না। তবে ধর্ম বা বিজ্ঞান ছাপিয়ে এসব এখনো মনে গেঁথে আছে অনেক মানুষের মনে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষ যখন মঙ্গলে যাওয়ার প্ল্যান করছে আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি নিয়ে ব্যস্ত সেখানে এসব কথা পড়ে নিশ্চই হাসছেন। আর এসবের সাথে চায়নিজদেরই বা কি সম্পর্ক। প্রতিটি জাতি ও সংস্কৃতিতেই কুসংস্কার আছে। আর চায়নিজরাও এর ব্যতিক্রম নয়। আজকে আমি চায়নিজরা যেসব জিনিস, সংখ্যা অথবা রঙকে শুভ বা অশুভ বলে মনে করে তা নিয়েই লিখছি ।
শুরুতেই সংখ্যা নিয়ে বলি। চায়নিজরা কিছু বিশেষ সংখ্যাকে শুভ বা অশুভ বলে মনে করে। তার মধ্যে চার আর আট উল্লেখযোগ্য।
চার: চায়নিজরা চার সংখ্যাটিকে অশুভ বলে মনে করেন। চায়নিজ চারকে বলে 四(Si)। আবার চায়নিজ ভাষায় মৃত্যুকে বলে 死(Si) । উচ্চারণ একই হওয়ায় এই সংখ্যাটিকে তারা অশুভ বলে মনে করে। তাই চায়নাতে কোনো কোনো বিল্ডিং এর লিফটে বা খাবারে মেন্যুতে চার সংখ্যাটি খুঁজে না পেলে অবাক করার কিছু নেই।
আট: চায়নিজদের কাছে আট সংখ্যাটি অনেক শুভ। চায়নিজে আটকে বলে 八(ba)। আর চায়নিজে উন্নতিলাভকে বলে 發(fā)। তাই এই সংখ্যাটি অনেক শুভ তাদের কাছে। আর যখন সংখ্যাটি হয়ে যায় 88 তাহলেও সোনায় সোহাগা। ২০০৩ সালে চায়নার সিচুয়ান এয়ারলাইন্স +86 28 8888 8888 ফোন নাম্বারটি কিনেছিলো ২.৩৩ মিলিয়ন আরএমবি(চায়নিজ কারেন্সি) দিয়ে। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক শুরু হয়েছিলো আট তারিখ আট মাসের (8.8.08) মাসের আটা বেজে আট মিনিট আট সেকেন্ডে। এছাডাও চায়না, তাইওয়ান, হংকং, ম্যাকাও টাইম জোন +08 ব্যাবহার করে। চায়নিজরা এই সংখ্যাটিকে এতই শুভ মনে করে ২০০৮ সালে চায়নায় 170 মিলিয়ন বাচ্চা জন্মগ্রহন করে যা 2007 সাল থেকে পাঁচ মিলিয়ন বেশি । নব্বইয়ের দশকের পর যা সর্বোচ্চ। মজার ব্যাপার হলো বেশিরভাগ শিশুই আগস্ট মাসে জন্ম নিয়েছিলো। ২০১৪ সালে চায়নার শেনজেন এ 8888 গাড়ির নাম্বারটি বিক্রি হয়েছিলো প্রায় ১৭ মিলিয়ন আরএমবি দিয়ে। এছাড়া চায়নার গাড়ির নাম্বার হোক বা বাড়ির নাম্বার বা খাবারের মেন্যু সব জায়গায় আট সংখ্যাটি পাবেনই।
এছাড়াও চায়নিজরা ছয়, নয় ও শূণ্যকে শুভ আর তেরোকে অশুভ মনে করে। আর 520 মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি এবং 99 মানে দীর্ঘজীবী হও।
লাল রং: চায়নাতে লাল রঙটি খুবই জনপ্রিয়। চায়নিজরা লাল রঙটিকে মনে করে ভাগ্য, সুখ ও খুশির প্রতীক। চায়নাতে যেকোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবে লাক রংটিই বেশি ব্যবহার করা হয়। গৃহস্থালির আসবাবপত্র থেকে শুরু থেকে সব জায়গায় লালের ছোয়া দেখা মেলবেই চায়নাতে।
সবুজ ক্যাপ: চায়নিজদের কাছে সবুজ রঙটি অশুভ। আর সবুজ ক্যাপ হলো আপনার জীবনসাথী আপনাকে ধোকা দিয়েছে। তাই চায়নাতে গিয়ে সবুজ ক্যাপ মাথায় দিয়ে চায়নিজ রমনী বা পুরুষের এর সহানুভূতি পাওয়ার বুদ্ধি খাটাতেই পারেন।
ভাগ্যের বিড়াল: আপনি যদি চায়নিজ কোনো দোকানে যান তাহলে খেয়াল করবেন দোকানে কোথাও না কোথাও একটু হাত তুকে বিড়ালের পুতুল আছে। চায়নিজে এই বিড়ালটির নাম 招财猫 (Zhāocái māo)। চায়নিজরা এই বিড়ালটাকে ভাগ্যের বিড়াল মনে করে। তাদের ধারনা এই বিড়ালটি তাদের ব্যবসায় লাভ বয়ে আনে। সতেরশো শতাব্দীর দিকে এটি জাপানে ও চায়নাতে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আপনি নিশ্চয়ই আপনা চায়নিজ বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে শুনেছেন এ ব্যাপারে আর না জানলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবেন।
ঘড়ি: আপনার যদি কোনো চায়নিজ বন্ধু বা বান্ধবী থাকে তাদের যাই উপহার দেন তবে কখনো ঘড়ি উপহার দিবেন না। চায়নিজরা ঘড়ি উপহার দেওয়াটাকে অশুভ মনে করে। ঘড়ি উপহার দেওয়াকে তারা আপনার সময় ফুরিয়ে আসছে বা সময় হাতে নেই বলে মনে করে । তাই এই ভুল কখনোই করবেন না।