চীনে কেন পড়তে যাবেন?
পিএইচডি'র উদ্দেশ্যে যখন আমি চীনে গমন করি, তখন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু বা সহকর্মী আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন যে কেনো আমি চীনে গেলাম! কেনো ইউরোপ বা আমেরিকায় গেলাম না! চীনের এমন কী আছে যে সেখানে পড়তে যেতে হবে!
চীনের মানুষ সম্পর্কে আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষের ধারণা হচ্ছে - চোখ ছোট, নাক বোচা, লম্বায় খাটো একটা জাতিগোষ্ঠী হচ্ছে চীনারা। তারা কথা বলতে পারে না বা কম কথা বলে। সাপ, ব্যাঙ, শিয়াল, কুকুর যা পায় তাই খায়। আর দেশটি আমাদের দেশ হতে কিছুটা উন্নত, তারা ক্ষুদ্র শিল্পের নিম্নমানের দ্রব্য প্রস্তুত করে দুনিয়াব্যাপী কম মূল্যে বিক্রি করে কিছু অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে, যা ইউরোপ আমেরিকার কাছে কিছুই না।
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের এমনসব চিন্তার সাথে বাস্তবের প্রায় মিল নেই বললেই চলে। সে আলোচনা এই নিবন্ধের শেষ দিকে করার আশা রাখি। কেনো আমাদের জনগণের চীন সম্পর্কে এমন ধারণা হয়েছে প্রথমে সে বিষয়ে দুইটি কথা বলতে চাই।
১. অল্প কিছুদিন আগেও চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের দেশের মতই ছিলো। ৪০ বছর আগের চীনের দৈনন্দিন জীবন ও বর্তমান চিত্র যে অকল্পনীয় পরিবর্তন হয়েছে, সেটা না দেখলে বোঝার উপায় নেই। ৪০ বছর আগেও খাবাবের অভাবে গণচীনের মানুষ আশেপাশের বিভিন্ন দেশে চলে যেত। তাইতো মালয়েশিয়ার ৩০% মানুষ চীনের অধিবাসী। সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ আশেপাশের অনেক দেশেই বিপুল পরিমাণ চীনের মানুষের স্থায়ী বসবাস দেখা যায়।
২. চীনের মানুষ প্রচন্ড রকমের রক্ষণশীল। অন্য দেশের সংস্কৃতি হতে তারা তাদের সংস্কৃতি আলাদা করে রেখেছে। এমনকি ৯০ সালের আগ পর্যন্ত চীনারা ইংরেজি ভাষা পর্যন্ত তাদের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে নাই। বিশ্বের সাথে একাকার না হয়ে নিজেদেরকে গুটিয়ে রেখেছে দীর্ঘকাল। অর্থ্যাৎ যতদিন বিশ্বকে নিজের অধীনে না নিতে পেরেছে, ততদিন তারা বিশ্ব হতে আলাদা রয়েছে। আজও পর্যন্ত চীনের মানুষ ফেসবুক,গুগল, বা ইউটিউব ব্যবহার করে না। এ ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ার বিকল্প তারা নিজেরা তৈরি করে নিয়েছে। এছাড়া প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অবাধ প্রবাহ চালু না থাকায় বিশ্ব হতে চীন অনেকটাই আলাদা করে রেখেছে নিজেকে। ফলে চীনে না গিয়ে দেশটির সাম্প্রতিক অভাবনীয় উন্নয়ন বোঝা কঠিন।
চীন সম্পর্ক এদেশের মানুষের যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তা নিয়ে কিছু বলতে চেয়েছিলাম, সেই কথায় এখন আসছি। চীনের মানুষের বর্তমান গড় উচ্চতা ৫ ফুট ৭.৬ ইঞ্চি, যেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা ৫ ফুট ৪.৪৮ ইঞ্চি। বৃদ্ধদের নাক ভোতা দেখা গেলেও, এখন অধিকাংশ যুবক যুবতীদের নাক সরু দেখা যায়। তবে চোখের আকার এখনো তেমন বড় করতে তারা পারেননি, হয়ত তারা সেটা চানও না।
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।