ছয় ঘন্টায় বিশ্ব ভ্রমণ
ছয় ঘন্টায় বিশ্ব ভ্রমণ। কথাটা শুনতে কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগছে তাই না! এটা কি আদৌ সম্ভব? কথায় আছে মন থেকে চাইলে পাথরেও নাকি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব! আর এই তো বিশ্বভ্রমণ। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হয়ত সত্যিই একদিন এই অসম্ভবকেও সম্ভব করে ফেলবে। যাই হোক এবার আসি আসল কথায়, ঘুরতে পছন্দ করে না এমন মানুষের সংখ্যা হয়ত কমই আছে। স্বাদ আর সাধ্যের মাঝে সবাই কম বেশি ঘুরতে ভালবাসে। চীনারাও এর ব্যতিক্রম নয়। চীনারা খুব পরিশ্রমী জাতি কিন্তু কাজের ফাঁকে একটু অবসর পেলেই তারা ছুটে যায় সুন্দর কোন জায়গায় তাদের অবসর কাটাতে। একটানা কাজ কখনও আনন্দ দেয় না। তাই পরিশ্রমের খোলস থেকে বের হয়ে নিজেদের আবার পরবর্তী কাজে উজার করে দিতেই তারা তাদের ছুটি গুলো খুব সুন্দর করে উপভোগ করে থাকে। এটা বললে ভুল হবে না যে, চীনারা ভ্রমণ পিপাসু জাতি। আর তাই যে কোন ছুটির দিনে যে কোন দর্শনীয় স্থানে গেলে দেখা মেলে সকল বয়সী মানুষের। তাদের এই আনন্দ ভ্রমনের মাত্রা বাড়াতে চীনের বিভিন্ন শহরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন থিম পার্ক। “উইন্ডো অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড” এমনই একটি থিম পার্ক, যেখানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত স্থাপনা, স্থাপত্য, শহর, দালান এবং রাস্তা এমন সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে কখনও কখনও মনে হতেই পারে আপনি সত্যিই বুঝি একই সময়ে সাত মহাদেশে অবস্থান করছেন।
চীনে যাবার আগে একটাই ইচ্ছা ছিল “গ্রেট ওয়াল” দেখতে যেতেই হবে। উইন্ডো অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড এর কথা আমার জানা ছিল না। এক ক্লাসমেটের উইচ্যাট মোমেন্টে দেখলাম, সে আইফেল টাওয়ার, পিরামিড এবং ইন্ডিয়া গেটের সাথে ছবি দিয়েছে। প্রথমে ভাবলাম, সে হয়ত সত্যিই ওসব জায়গাতে ঘুড়ে এসেছে। কয়েক মুহুর্ত পরে দেখলাম, অন্য এক ক্লাসমেটও একই মত প্রায় ছবি দিয়েছে। এবার বুঝলাম এসব আশেপাশে কোথাও আছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এটা শেনজেনের হ্যাপি ভ্যালির পাশে ৪৮০০০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত একটি থিম পার্ক “উইন্ডো অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড”। এটি বিশ্ব-সংস্কৃতির প্রতিপাদ্যকে বহন করে। বিশ্ববিখ্যাত ভূদৃশ্যের প্রতিলিপি, প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং লোক রীতি ও লোকগীতি ও নৃত্য উপস্থাপন করে থাকে। এটি পরিবারের সাথে, বিশেষত ছোট বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা। কারণ এটি একই সাথে ভূগোল, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে সক্ষম। কিন্তু সময় ও সুযোগের অভাবে সেখানে ঘুড়তে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠছিল না।
অবশেষে চীনের জাতীয় দিবসের ছুটিতে সেখানে যাবার সুযোগ হয়েই গেল। দিনটা ছিল ১ অক্টোবর, ২০১৯। চীনের নববর্ষের ছুটির পর এটিই একমাত্র বড় ছুটি। ভাগ্যক্রমে আমার যাত্রাসঙ্গী হিসাবে পেয়েছিল আমার প্রাণের ক্যাম্পাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে আবার আমার সাথে চায়নার একই ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করতে আসা জুনিয়ার রিয়ন, রূপক এবং উদয়কে। যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাস গুয়াংজুতে আর উইন্ডো অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড হল শেনজেন শহরে তাই খুব সকালে আমরা রওনা দিলাম শেনজেনের উদ্দেশ্যে। আমরা সবাই খুব উত্তেজিত ছিলাম, কারণ এটা ছিল আমাদের সবার প্রথম বুলেট ট্রেনের উঠার অভিজ্ঞতা। ট্রেন কত স্পিডে যাবে? ট্রেনের ভিতর বসে থাকতে কেমন লাগবে? ট্রেনের টিকিট কাটার পর থেকেই এমন জলপনা কল্পনা করে আমাদের দিন কাটছিল। অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষন চলে এল। গুয়াংজু ইস্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হল। এই রেলওয়ে স্টেশন একটা ইন্টারন্যাশনাল স্টেশন, কারন এখানে থেকে হংকং এরও ট্রেন যায়, এছাড়া চীনের বিভিন্ন প্রদেশেও এই স্টেশন থেকে যাওয়া যায়। এত বড় আর এত সুন্দর রেল স্টেশন আমি আগে কখনও দেখেনি। এর ভিতরেই রয়েছে আবার সুপার শপ, শপিং মল এবং দেশী বিদেশী রেস্তোরাঁ ইত্যাদি।
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।