নীরব শহর, করুণ স্মৃতি: নানজিংয়ে জাতীয় স্মরণ দিবসের অনুষ্ঠান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী ও নানজিং গণহত্যার শিকার প্রায় ৩ লাখ মানুষের স্মরণে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) চীন যথাযথ মর্যাদায় ১২তম জাতীয় স্মরণ দিবস পালন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে নানজিংয়ের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে শোক পালন ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ১০টায় নানজিং শহরে "গণহত্যার শিকারদের স্মৃতিসৌধে" কেন্দ্রীয় জাতীয় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ শোকের প্রতীক কালো পোশাক পরে, বুকে সাদা ফুল গুঁজে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন গণহত্যা স্বচক্ষে দেখা ব্যক্তিরা, স্থানীয় শিক্ষার্থী, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আন্তর্জাতিক অতিথিরা। এই সময় চীনের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এছাড়াও নানজিং শহরের ঐতিহাসিক প্রাচীরের পাশে ঝেংজুয়ে টেম্পলে স্থানীয় বাসিন্দারা ফুল দিয়ে শোক প্রকাশ করেন।
সকাল ১০টা ১ মিনিটে শহরজুড়ে বাজতে থাকে শোকের সাইরেন। মুহূর্তেই নগরের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, গাড়ির হর্ন বেজে ওঠে একসঙ্গে। পথচারীরা থেমে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান ৮৮ বছর আগে হারানো নিরীহ প্রাণগুলোকে। এক মিনিটের নীরবতা পালনের মাধ্যমে পুরো শহর যেন ফিরে যায় ইতিহাসের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোতে।
কী ঘটেছিল ১৯৩৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর?
১৯৩৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর জাপানি সেনাবাহিনী তৎকালীন চীনের রাজধানী নানজিং দখল করে। পরবর্তী ছয় সপ্তাহ ধরে তারা চালায় ইতিহাসের এক কলঙ্কিত ও বর্বর হত্যাযজ্ঞ। জাপানি সৈন্যরা প্রায় ৩ লাখ চীনা বেসামরিক নাগরিক ও নিরস্ত্র সৈন্যকে হত্যা করে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কালো অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে বিবেচিত এবং বিশ্বে "নানজিং গণহত্যা" নামে কুখ্যাত।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্মরণ ও শান্তির বার্তা
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজিত এই রাষ্ট্রীয় স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পলিটব্যুরোর সদস্য ও কেন্দ্রীয় সংগঠন বিভাগের প্রধান শি তাইফেং । প্রধান অতিথি শি তাইফেং তাঁর ভাষণে বলেন, "আমরা ইতিহাস স্মরণ করি, অতীত ভুলে যাই না, শান্তিকে ভালোবাসি এবং ভবিষ্যত গড়ার দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করি।"
স্মরণসভার শেষ পর্যায়ে ৮৮ জন তরুণ-তরুণী "শান্তি ঘোষণাপত্র" পাঠ করে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৬ জন প্রতিনিধি "শান্তির ঘণ্টা" বাজান। ঘণ্টাধ্বনির সাথে সাথে ৩০০০ শান্তির প্রতীক সাদা কবুতর আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয়, যা মৃতদের জন্য শোক ও বিশ্বশান্তির আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠে। দেশের ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে "ইতিহাস শেখো, শান্তি পাঠ করো" শীর্ষক বিশেষ ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের আয়োজন করে।
২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি ১৩ ডিসেম্বরকে "নানজিং গণহত্যার শিকারদের জাতীয় স্মরণ দিবস" হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়। দিবসটির মূল বার্তা হলো, ইতিহাসের করুণ অধ্যায়কে শুধু শোকের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ না রেখে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য কাজ করা।
Arif/Raoha
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।