বই পর্যালোচনাঃ আমার দেখা নয়াচীন
আমার দেখা নয়াচীন শেখ মুজিবুর রহমানের গণচীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা একটি ডায়েরির পুস্তকি রূপ। শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি বইটি প্রকাশ করেছে।
যদিও বইটি একটি ভ্রমণকাহিনী, তবে গভীরভাবে দেখলে ভ্রমণ
কাহিনীর চেয়েও বড়ো ক্যানভাস রয়েছে এতে। ১৯৫০ দশকে কমিউনিস্ট সরকারের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত
চীন (যা ‘নয়া চীন’ নামে অভিহিত) ভ্রমণের বিভিন্ন স্থান দর্শন ও এর খুঁটিনাটি বিশ্লেষণের
পাশাপাশি নিজস্ব আদর্শিক ভাবনাগুলোও বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
এই ভ্রমণে চীনের সমাজ ব্যবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার
নিজের ধর্মীয় চিন্তাগুলো অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু
চীন ভ্রমণে দেখতে পান, সেখানকার মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সমান অধিকার
নিয়ে বসবাস করছে। তাদের কারোর কোনো অভিযোগ নেই রাষ্ট্র বা শাসকদের বিরুদ্ধে। বিশেষ
করে ধর্মের ভিত্তিতে কেউ বিভাজন ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না। তিনি মুসলিম
চীনাদের সঙ্গে একান্তে আলাপ করেছেন। তাদের ধর্মচর্চা বা রাষ্ট্রীয় চাকরিতে কোনো বৈষম্য
করা হয় কিনা, তা জেনেছেন। তিনি আশ্বস্ত হয়েছেন, নয়া চীনে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই।
আগের চিয়াং কাই সরকারের সময়ে এমনটির নজির থাকলেও তা পরে আর দেখা যায়নি।
পূর্বের সরকার
নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এবং ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য নিজেরাই ধর্মীয় দাঙ্গাকে
উসকে দিত। বঙ্গবন্ধু তার বইয়ে নতুন চীনের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহনশীলতার দিকটি
তুলে ধরেছেন গুরুত্ব দিয়ে। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেছেন, ভারতীয় উপমহাদেশেও চিয়াং
কাই সরকারের মতো ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে জিইয়ে রাখার জন্য একদল অন্য দলের বিরুদ্ধে এ ধরনের
অপকৌশল প্রয়োগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে উসকে দিত। ফল হিসেবে উপমহাদেশে সংঘটিত অনেক
হানাহানি ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হলেও সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গার রেশ কাটেনি এবং এজন্য কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলকে দায়ী করেন।
বঙ্গবন্ধুর
মনে হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কোনো ধর্মীয় কারণে হয় না। এটি কোনো কোনো গোষ্ঠীর
বা রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ যদি সত্যিকারভাবে
ধর্মভাব নিয়ে চলত, তাহলে আর মানুষে মানুষে এবং রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে এভাবে যুগ যুগ ধরে
সংগ্রাম হতো না। কিন্তু মানুষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ধর্মের অর্থ যার যেভাবে
ইচ্ছা সেভাবে চালাতে চেষ্টা করেছে।’
বঙ্গবন্ধুকে
সফর করতে হয়েছে রেঙ্গুন, হংকং, পিকিং, তিয়ানজিং, সাংহাই—প্রভৃতি শহরের মধ্য দিয়ে।
১৯৪৯ এর ১লা অক্টোবর চীনে কম্যুনিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর, তাদের শাসন সম্পর্কে
যেসব নেতিবাচক কথাবার্তা কানে এসেছিল, সেগুলো যাচাই করে দেখতে চেয়েছেন তিনি।
প্রথমেই বঙ্গবন্ধুর শান্তি সম্মেলনের অভিজ্ঞতার কথা
তুলে ধরা যাক। মোট ৩৭ দেশের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সম্মেলনটি একটি কম্যুনিস্ট
দেশে হলেও, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নন-কম
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।