হারিয়ে যাওয়া শৈশবের সোনালী অতীত
অজয় কান্তি মন্ডল: সাতক্ষীরা
জেলার আশাশুনি সদর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অজপাড়াগায়ের গ্রামে জন্ম আমার। গ্রামের
অপরূপ সৌন্দর্য সবারই মনে টানে আর যখন গ্রাম ছেড়ে, স্বদেশ ছেড়ে, প্রবাসে পাড়ি
দেওয়া তখন মনে হয় গ্রামের প্রতি, গ্রামের মানুষের গায়ে মাটির গন্ধের প্রতি মোহতা
আরও বেড়ে যায়। ছোট থেকেই দেখে এসেছি গ্রামের সবুজে শ্যামলে ঘেরা, সুজলা সুফলা
মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি। সেই সময়ে ধানের ক্ষেতের ভিতর দিয় এঁকেবেঁকে চলা মেঠো পথ,
বন্ধুদের সাথে দলবদ্ধভাবে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া থেকে শুরু বাবা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে
দুপুরের রোদে মাঠে গিয়ে ঘুড়ি উড়ানো, বাড়ির কাজের লোকের সাথে মহিষ চরানোর স্মৃতি
এখনো সুস্পষ্ট ভাবে মনের মনিকোঠায় ভেসে ওঠে।
ছোট থাকতে দেখেছি অনেক ধান উঠত আমাদের
বাড়িতে। ঠেলা গাড়িতে করে ধান কেটে বাড়ি তুলত,
তারপরে সেগুলোর গাদা (এক জায়গায় জমিয়ে উঁচু করে রাখা) দিয়ে রাখত কয়েকদিন। সময় সুযোগ এবং আবহাওয়া বুঝে সেগুলো নিজেদের মহিষ দিয়ে মলন (মাড়াই) দিত।
অনেক ধুমধাম চলত এই সময়, ধান মাড়াই করে গোলায় (ধান রাখার ঘর) তুলতে পারাটা ছিল যেন
বাড়ির সবারই সবচেয়ে বড় একটা স্বস্তির কাজ। মা-কাকিমা, ঠাকুরমা-ঠাকুরদাদা,
বাবা-কাকা কারো যেন দম ফেলার সময় থাকত না। চারিদিকে পাকা ধানের গন্ধে মুখরিত থাকত। ধান মাড়াইয়ের পরে সেগুলো থেকে ভুসি
(ধানের চিটা/অপরিপক্ক ধান) ঝেড়ে ওইদিনের ভিতরে গোলায় তোলা হত। সবকিছু নির্দিষ্ট
সময়ের ভিতর শেষ করতে হবে সেই অনুযায়ী কাজের লোক নেওয়া হত। যেদিন ধান মলনের কাজ চলত
সেদিন সকাল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত সবাই ব্যস্ত থাকত। কোন কোন সময় ধান মাড়াইয়ের রাতে বাবাকে
হ্যাঁচাকের (আগেকার দিনে ব্যবহৃত কেরোসিনের সাহায্যে জ্বালানো বিশেষ আলো) ব্যবস্থা
করতেও দেখেছি। আমরা ছোট থাকলেও মনের ভিতর ওইদিন
একটা উৎসব মুখর পরিবেশ কাজ করত। তাই ওইদিন পড়ালেখা, স্কুল
যাওয়া থেকে অঘোষিত ছুটি ভোগ করতাম।
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।