আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য চীনে অনেক শিক্ষাবৃত্তি রয়েছে। চীনা সরকারি শিক্ষাবৃত্তি, প্রদেশীয় সরকার শিক্ষাবৃত্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট শিক্ষাবৃত্তি, বেল্ট এন্ড রোড শিক্ষাবৃত্তি, সিল্ক রোড শিক্ষাবৃত্তি, ANSO শিক্ষাবৃত্তিসহ আরও আনেক শিক্ষাবৃত্তি রয়েছে। চীনা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষাবৃত্তির নাম সিএসসি (CSC) - চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল। এই শিক্ষাবৃত্তিতে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পড়াশোনার খরচ সম্পূর্ণ ফ্রি সুযোগের পাশাপাশি প্রতি মাসে উপবৃত্তি পেয়ে থাকেন। সিএসসি (CSC) বৃত্তি মূলত দুইটি বিভাগে দেওয়া হয়ে থাকে। এ টাইপ (Type A) এর বিভাগে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এবং বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি ডিগ্রির জন্য এবং বি টাইপ (Type B) বিভাগে সরাসরি চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সিএসসি ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। এ টাইপ (Type A) এর আবেদন সাধারণত ডিসেম্বার মাসের মাঝে শুরু হয়ে জানুয়ারি মাসে শেষ পর্যন্ত করা যায়। নিম্নে সিএসসি (CSC) টাইপ এ (A) বিভাগের সুযোগ-সুবিধা ও আবেদন পদ্ধতি বিস্তারিত দেওয়া হল।
এ টাইপ (Type A) এর সুযোগ-সুবিধা সমুহঃ
১। প্রথম ও শেষবারের বিমান ভাড়া ফ্রি।
২। পড়ালেখার খরচ ফ্রি।
৩। মাসিক উপবৃত্তিঃ ব্যাচেলর- ২৫০০, মাস্টার্স- ৩০০০, এবং পিএইচডি ডিগ্রি- ৩৫০০ চীনা ইউয়ান দেওয়া হয়ে থাকে।
৪। আবাসন ফ্রি।
৫। স্বাস্থ্য বীমা।
যোগ্যতাঃ
ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্যে এইচএসসি সার্টিফিকেট ও সর্বোচ্চ ২৫ বছর বয়স।
মাস্টার্স ডিগ্রির জন্যে ব্যাচেলর বা ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট ও সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়স।
পিএইচডি ডিগ্রির জন্যে মাস্টার্সের সার্টিফিকেট ও সর্বোচ্চ ৪০ বছর বয়স।
আবেদন করতে যা যা লাগবেঃ
১। পাসপোর্ট
২। ন্যাশনাল আইডি কার্ড/জন্ম নিবন্ধন কার্ড
৩। সর্বশেষ ডিগ্রির সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট (ফটোকপির নোটারী বাধ্যতামূলক)
৪। দুইটি রেকোমেন্ডেশন লেটার
৫। আইইএলটিএস (IELTS), এইচএসকে (HSK), অথবা ইংরেজি প্রফিসিয়েন্সি সার্টিফিকেট
৬। মেডিকেল সার্টিফিকেট (চীনা ফরম্যাট)
৭। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (বাধ্যতামূলক নয়)
৮। স্টাডি প্ল্যান/ রিসার্চ প্রপোজাল
৯। অন্যান্য সনদপত্র
বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষকদের তালিকাঃ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগ অনুযায়ী শিক্ষকদের তালিকা দেখতে ভিজিট এই ওয়েবসাইট https://www.campuschina.org/universities/index.html।
আবেদন পদ্ধতিঃ
প্রথম ধাপ: CSC এ টাইপ (TYPE A) স্কলারশিপের আবেদন করতে দুই দেশের দুটি ওয়েবসাইট এ আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হয়। প্রথমে অনলাইনে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট http://scholar.banbeis.gov.bd/cscchina/ সঠিকভাবে আপনার তথ্যগুলো দিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: সিএসসি (CSC) - চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল এর ওয়েবসাইট https://studyinchina.csc.edu.cn/#/login লিংকে গিয়ে ইউজার নেইম, ইমেইল, পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনার একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। আপনার দেওয়া ইমেইলে একটি মেইল যাবে লিংকসহ, লিংকে ক্লিক করে আপনার অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভেট করতে হবে। অনেক সময় মেইল যেতে একটু সময় নেয় অথবা স্প্যাম বা জাঙ্ক ফোল্ডারে চলে যায়।
ওয়েবসাইটের আপনার অ্যাকাউন্ট লগ ইন (Login) করে অ্যাপ্লাই নাও (Apply Now) ক্লিক করবেন, তাহলে একটি তথ্য দেওয়ার পেইজ পাবেন। সিএসসি ওয়েবসাইটের আবেদন ফর্মে বাংলাদেশের এজেন্সি নাম্বার ০৫০১ হবে। সঠিকভাবে আপনার তথ্যগুলো দিয়ে আবেদন ফর্মটি পূরণ করে দিবেন। তারপর সেইভ অপশন এ ক্লিক করলে সেটা সেইভ হয়ে পরবর্তী পেইজ আসবে, সেখানে আপনার পূর্ববর্তী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেজর এবং স্কোর দিতে হবে। পাবলিকেশন পেপার এবং চাকুরির অভিজ্ঞতা থাকলে ভাল হয়, এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পেপার ও চাকুরির অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট আপলোড দিতে হবে। এই পেইজেও সবকিছু সঠিকভাবে দিয়ে সেইভ দিলে আরেকটা পেইজ আসবে। এখানে আপনার পিতা-মাতাসহ আপনার ঠিকানার ইনফরমেশন দিতে হবে। দিয়ে আগের মতোই সেইভ দিলে ফিনিশ নামে একটি অপশন আসবে, সেখানে ক্লিক করতে হবে।
ওয়েবসাইটের নীচের বাম পাশে অ্যাড/নেক্সট অ্যাপ্লিকেশন নামে একটা অপশন আসবে, সেখানে ক্লিক দিলে একটা পেইজ আসবে। এরপর আপনার ল্যাঙ্গুয়েজ সার্টিফিকেট থাকলে সেগুলোর ইনফরমেশন দেবেন। এখন নিচেই পাবেন আপনার কাগজপত্র আপলোড দেওয়ার অপশন। সেখানে কাগজপত্রগুলো আপলোড দিয়ে দেবেন। ছবি ছাড়া সবগুলো পিডিএফ ফাইলে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সব ডকুমেন্টগুলো পিডিএফ বা ইমেজ ফরমেট এ করে নেবেন। এখানে বলে রাখা ভাল, আপনার ছবি ৫০-১০০ কিলোবাইট (KB) এবং বাকি ফাইলগুলো ১-১.৫ মেগাবাইট (MB) এর বেশি হওয়া যাবে না। সবকিছু আপলোড দিয়ে, সেইভ দিয়ে দেবেন। সব ঠিকঠাক থাকলে ফিনিশ বাটনে চাপ দিয়ে দেবেন। তাহলেই আপনার আবেদন করা শেষ। এরপর প্রোফাইল থেকে আপনার আবেদন ফর্মটি পেয়ে যাবেন।
তৃতীয় ধাপ: বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট এবং সিএসসি (CSC) - চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল এর ওয়েবসাইট এর ওয়েবসাইট থেকে পূরণকৃত ফর্ম দুটি ডাউনলোড করে নেবেন। তারপর ডাউনলোডকৃত ফর্ম দুটি ও অন্যান্য ডকুমেন্টগুলো প্রিন্ট আউট করে জমাদানের শেষ তারিখের এর আগে বাংলাদেশ সচিবালয়ে একটি খামে হার্ডকপি পাঠিয়ে বা জমা দিতে হবে।
জমা দেওয়ার ঠিকানাঃ বাংলাদেশ সচিবালয়, ২নং গেইট এর ৯ নাম্বার কাউন্টার। জমা দেওয়ার সময়ঃ সকাল ১০ থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত (সরকারি ছুটির দিন সচিবালয় বন্ধ থাকবে)।
জমা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের ভাইভার দেওয়ার জন্য একটি তালিকা এবং জুন মাসের শেষে অথবা জুলাই মাসের প্রথমে চূড়ান্ত তালিকা বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট http://www.shed.gov.bd/site/view/scholarship/ প্রদান করা হয়ে থাকে।
লেখক: মারুফ হাসান, পিএইচডি শিক্ষার্থী, জনপ্রশাসন বিভাগ, হুয়াযং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, উহান, হুবেই, চীন।