গর্জে ওঠো বাংলাদেশ
মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, ছংছিং, চীন থেকে। ছোট্ট একটা মানচিত্র, অনেক বৈচিত্র নিয়ে সাজানো প্রকৃতি, উর্বর ফসলের ক্ষেত আর শান্তিপ্রিয়, সহজ-সরল একটা গোষ্ঠী। চৈত্রের দাবদাহ, বর্ষায় কানায় কানায় ভরে ওঠা নদ-নদী, শীতের সকালে খেজুরের রস আর মুড়ি-মুড়কিতে ও বসন্তের হাওয়ায় সুখী একটা দিন কেটে যাচ্ছিল মানুষগুলোর। হঠাৎই কালবৈশাখির তান্ডব হানা দিল নিরীহ এই প্রাণে। কিছুই বুঝে ওঠার আগেই শত-শত প্রাণের বলিদান দিতে হল জাতিটিকে। তবে, এরা তো দামাল, অকুতোভয়! ভালবাসতে যেমন জানে, তমনি নিজের সম্মান রক্ষায় গর্জে ওঠে একহয়ে, এক একটি মজবুত কেল্লায় পরিণত হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় নিজের মায়ের সম্মান রক্ষার্থে, ছিনিয়ে আনে বিজয়।
চবলছিলাম ১৯৭১ এর সেই রক্তক্ষয়ী ৯ মাসের ত্যাগ আর ভালবাসায় জন্ম নেওয়া আমাদের বাংলাদেশ এর কথা। এখন ডিসেম্বর মাস, প্রত্যেকটি অন্তরের জমে থাকা তুষের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে মাতৃপ্রেমে। প্রেয়সীর প্রতি ভালবাসা যেমন সবসময়ই থাকে তবে বিশেষদিনগুলোতে চেষ্টা করা হয় একটু আলাদাভাবে উদযাপন করতে ঠিক তেমনিই দেশপ্রেম সবার মধ্যেই থাকে তবে, প্রকাশটা বিশেষত বিশেষ দিনগুলিতেই মেলে একটু অন্যরকমভাবে।
বিজয়ের মাসে আরও একটা ছোট্ট বিজয়ের গল্প জানাব আপনাদেরকে। গত ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ এ চীনের ছংছিং মিউনিসিপালিটিতে অবস্থিত “ছংছিং ইউনিভার্সিটি অব পোষ্টস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস” এ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এ বছরের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের।
এই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় সব ইভেন্টর গড় মার্কে “টীম বাংলাদেশ” প্রথম স্থান অধিকার করে। বাংলাদেশ ছাড়াও এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে ভারত, পাকিস্তান, আফ্রিকা, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস ও শ্রীলংকার প্রতিযোগী দলসমূহ। ৫টি ভিন্ন ধরণের খেলার আয়োজন করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সংঘঠনের পক্ষ থেকে।
প্রত্যেক দলে ১০ জন করে খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে নিজ নিজ দেশ থেকে। বাংলাদেশ দলের খেলায়াড়রা ছিলেন- তারেক আহমেদ সোহেল (টেলিকমিউনিকেশন, মাস্টার্স) মো. আব্দুল ওয়াদুদ (কম্পিউটার সাইন্স এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যচেলর), মোহাম্মদ কবির (সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যচেলর), কল্পতরু রয়(ম্যানেজমেন্ট সাইন্স এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স), ক্যামেলিয়া চাক (কম্পিউটার সাইন্স এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যচেলর), মিশকাত জাহান রাফি (কম্পিউটার সাইন্স এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যচেলর), রিফাতুল হক (কম্পিউটার সাইন্স এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যচেলর), মো. তরিকুল ইসলাম রুবেল (ম্যানেজমেন্ট সাইন্স এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স), মো. জয়নাল আবেদিন (কম্পিউটার সাইন্স এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যচেলর) ও সমাপ্তি ইয়াসমিন (কম্পিউটার সাইন্স এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যচেলর)।
খেলয়াড়দের বিগত কয়েক সপ্তাহের নিরলস পরিশ্রম আর খেলার প্রতি উৎসাহই তাদের এ বিজয়ের নেপথ্যে কাজ করেছে বলে মনে করেন দলনেতা তারেক আহমেদ সোহেল। ৫ টি খেলার পয়েণ্টের গড় করে নির্ধারণ করা হয় বিজয়ী দলকে। শুরুর এবং শেষ খেলাটিতে বাংলাদেশ দল কিছুটা পিছনে থাকলেও তাদের মধ্যবর্তী খেলাগুলোর অসাধারণ নৈপুণ্য ছিনিয়ে আনে বিজয়ের মুকুট। প্রত্যেকটি দেশকে পেছেনে ফেলে জয় করে বিজয়মাল্য। অনুষ্ঠানটিতে, ১ম স্থান অর্জনকারি বাংলাদেশ দল এর জন্য ছিল আকষর্ণীয় পুরষ্কার এবং অন্যান্য সকল দলের খেলোয়াড়দের জন্য ও ছিল পুরষ্কার এর ব্যবস্থা।
মাঠে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেণ্ট, ক্রিড়া সংঘঠনের মাননীয় ব্যক্তিবর্গগণ ও আন্তর্জাতিক স্কুল ও কলেজের দায়িত্বরত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষকমণ্ডলী। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবছরের ৩ জন বাঙ্গালি কমিউনিটির প্রতিনিধী মো. হাসান লিমন, মো. সাইয়ুম সায়মন ও মো. শামীম হাসান স্বার্বক্ষণিক খেলায় উপস্থিত ছিলেন খেলোয়াড়দের দেখা-শোনায়। বাঙালী কমিউনিটিসহ অন্যান্য সকল দেশের সদস্যগণ ও মাঠে উপস্থিত ছিলেন খেলা উপভোগ করার জন্য ও নিজ নিজ দেশের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার জন্য। শিক্ষক-কর্মচারীসহ কলোম্বিয়া, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের এর ছাত্র-ছাত্রীরা অভিবাদন জানায় বাংলাদেশ দলকে তাদের অভূতপূর্ব এ বিজয়ে। এদিকে অন্যান্য কমিউনিটির প্রতিনিধীগণও ভূয়সী প্রসংসা করেন বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের এবং পরবর্তীতে এমন সুস্থ্য প্রতিযোগীতার আয়োজনের আহ্বান জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে। সকাল ৯ ঘটিকায় শুরুহয়ে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চলে ক্রিড়া অনুষ্ঠানটি।
প্রায় ৫ ডিগ্রী তাপমাত্রার এই শীতের ভোরে কিছু ছেলে-মেয়ের দেশের প্রতি মমতা আর ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে চীনের পাহাড়ে ঘেরা ছংছিং শহরে। বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাটিকে আকাশে ভাসিয়ে তোলে স্বগর্বে। বিজয়ের আনন্দে আর একটু রং ঢেলে দেয় তাদের আজকের এই বিজয়।
লেখক
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট
ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশ সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং,
ছংছিং ইউনিভার্সিটি অব পোস্টস এন্ড টেলিকমিউনিকেশনস, ছংছিং, চীন
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।