ফাহিম শাহরিয়ার, জিয়াংসু, চীন থেকেঃ প্রথমত,
চাইনিজ গভঃ স্কলারশিপ (সিজিএস) হলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য চীন
সরকারের দেয়া স্কলারশিপ, যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখভাল করে থাকে চাইনিজ
স্কলারশিপ কাউন্সিল (সিএসসি)। লোকমুখে তাই স্কলারশিপটির নামই হয়ে গেছে
সিএসসি স্কলারশিপ।
এই স্কলারশিপে আবেদন করার উপায় হচ্ছে,
(১) বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে (টাইপ - এ)।
(২) চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে (টাইপ - বি)।
আবেদনের সময়:
বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে নিচের ওয়েবসাইট থেকে করতে হবে।
আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রতি বছরই প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি বের হয়।
মন্ত্রণালয়ের
মাধ্যমে আবেদন করার ক্ষেত্রে জিনিসটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো ভালো
অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কেননা স্কলারশিপটি
পেতে হলে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতেই হবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী,
অনলাইনে আবেদনের সময় সিএসসি- এ টাইপে এ আপনি দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিষয়
পছন্দের তালিকায় রাখতে পারবেন। A Category তে দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই
করবেন আর তৃতীয় অপশনে None বসাবেন।
ব্যাচেলরদের HSC পরীক্ষার
ভাল ফলাফল, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস ,ভাল একজন শিক্ষকের প্রশংসাপত্র,
HSK অথবা IELTS সার্টিফিকেট থাকলে অবশ্যই বেশ এগিয়ে থাকা যাবে। প্রাথমিক
যাচাই-বাছাইয়ের পরে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে প্রথম ধাপে বাতিল করা হয়, আর বাকি
টিকে থাকা প্রার্থীরা থাকে বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার
অপেক্ষায়। নিশ্চিত বার্তা পেলে নির্ধারিত স্থানে গিয়ে সাক্ষাৎকার দিতে হয়।
আমার
নিজ অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি CSC-A type এ ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদেরকে খুব কম
নেওয়া হয়। বলতে পারেন প্রতি বছর ২-১ জন সুযোগ পায়। আপনি ডিপ্লোমা
ডিগ্রিধারী হয়ে থাকলে ভাল CGPA এর সাথে IELTS/HSK সার্টিফিকেটও আপনার থাকতে
হবে।
আমি ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদেরকে পরামর্শ দেব CSC-B ক্যাটাগরিতে আবেদন করার জন্য।
মাস্টার্সের
জন্যে রেজাল্টের তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে যত ভালো সিজিপিএ, রিসার্চ
প্ল্যান, পাবলিকেশন এবং চাকরির অভিজ্ঞতা থাকবে, সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা ততই
বেড়ে যাবে, সাথে যদি আরও থাকে IELTS এ ৬.৫-৭ ব্যান্ড স্কোর।
চীনে
সিএসসি অনেক মর্যাদাপূর্ণ একটি স্কলারশিপ, যেখানে ব্যাচেলর
শিক্ষার্থীদেরকে চাইনিজ মাধ্যমে অধ্যয়ন করতে হয়। ব্যাচেলরে CSC/CGS
Scholarship মানেই চাইনিজ মাধ্যম, ইংরেজিতে পড়ার কোনো সুযোগ নেই।
আর মাস্টার্সে ইংলিশ এবং চাইনিজ দুই মাধ্যমেই পড়ার সুযোগ আছে। তবে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি মাধ্যমকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
ব্যাচেলরদের
জন্যে সর্বমোট ৫ বছরের কোর্স, প্রথমে ১ বছর আপনাকে চাইনিজ ভাষা শিখতে হবে,
তারপর ৪ বছর আপনার মেজর কোর্স আপনাকে চাইনিজ ভাষাতেই পড়তে হবে।
আর
যদি কারো HSK লেভেল ৪ কিংবা ৫ করা থাকে, তবে তাকে আর ১ বছর চাইনিজ ভাষা
পড়তে হবে না। সরাসরি সে মেজর কোর্সের ক্লাস শুরু করতে পারবে, অর্থাৎ তখন
তার কোর্স হবে ৪ বছর।
সুবিধাদি:
এই ফুল ফ্রি
স্কলারশিপের অধীনে আপনি মাসিক বৃত্তি হিসেবে (ব্যাচেলর) ২৫০০ ইউয়েন করে
পাবেন, দেশি টাকায় যা প্রায় ৩৩ হাজার। টিউশন খরচ ফ্রি, হোস্টেলে থাকা ফ্রি,
এমনকি চিকিৎসা বীমাও বিনামূল্যে পাবেন।
মাস্টার্সেও একই
সুবিধাদিই থাকবে শুধু বৃত্তি হিসেবে পাবেন ৩০০০ ইউয়েন, দেশি টাকায় যা প্রায়
৩৬ হাজার এবং পিএইচডিতে পাবেন ৩৫০০ ইউয়েন, যা দেশি টাকায় প্রায় ৪২ হাজারের
মত। সেই সাথে বিমান ভাড়াও স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষই প্রদান করবেন!
এখন কথা বলবো CSC-B ক্যাটাগরিতে চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আবেদন করার বিষয়ে।
সরাসরি
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আবেদন: এই প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ এবং ঝুঁকি
তুলনামূলকভাবে কম, সেইসাথে সুযোগের সম্ভাবনাও অনেক বেশি। আবেদন শুরু হয়
সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আর শেষ হয় জুন-জুলাইয়ের দিকে। CSC-B
ক্যাটাগরিতে আপনি সর্বোচ্চ ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন । প্রথমেই
যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আবেদন করবেন, সেটি নির্বাচন করে নেবেন, তাদের
আবেদনের প্রক্রিয়া এবং সময়সীমা ভালো করে দেখে নেবেন ওয়েবসাইট থেকে। তাদের
কিছু বিষয় নির্দিষ্ট করা থাকে, ওই সমস্ত বিষয়গুলো মধ্যেই একটি মাত্র বিষয়ে
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে CSC-B টাইপে আবেদন করতে পারবেন ব্যাচেলর,
মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে।
CSC-B এর সুবিধাদিও
মন্ত্রণালয় -এ টাইপের মতোই থাকবে। শুধু চীনে আসার সময় বিমান ভাড়া দেয়া হবে
না, অর্থাৎ বিমান ভাড়া নিজ খরচেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর মন্ত্রণালয়ের
মাধ্যমে যারা আবেদন করে আসবে, তারা পাবে বিনামূল্যে বিমানের টিকেট। আবার
যখন ব্যাচেলর/মাস্টার্স কোর্স শেষ করে দেশে ঘুরতে যাবে, তারা তখনও আবার
একটি বিনামূল্যের
বাংলাদেশ-চীন ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের
সদস্য হতে ক্লিক করুন
এখানে
BCYSA.ORG
এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ
অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর
ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল :
news.bcysa@outlook.com।