শুভ শক্তির সূচনা ও সকল অশুভ শক্তির বিনাশ হোক
অজয় কান্তি মন্ডল: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘দুর্গা পূজা’। এই উৎসবের শুভ সূচনা পূজার ঠিক ছয় দিন আগে ‘মহালয়া’র মধ্য দিয়ে হলেও সমস্ত শরত জুড়ে প্রকৃতির মাঝে বিরাজ করে অনাবিল এক স্নিগ্ধতা। তাইতো, শরত সকলের কাছে নিয়ে আসে শান্তির বার্তা নিয়ে। একদিকে গরমের দাবদাহ থেকে মুক্তি অন্য দিকে শীতের আগমনী বার্তা মনকে ভরে দেয় প্রশান্তিতে। সেইসাথে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা এবং মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া কাশ ফুলের শুভ্রতায় শরত যেন প্রকৃতিতে তার আপন মহিমা নিয়েই হাজির হয়। প্রকৃতির এই শুভ লগ্নে শারদীয় দুর্গা উৎসব বাঙালির মনে এনে দেয় এক অন্যরকম অনুভূতি। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে যে অনুভূতির ভিতর শোভা পায় শারদ উৎসবের প্রকৃত আমেজ।
কালে কালে বদলেছে উৎসবের ধরন, উৎসবের রঙ। কিন্তু মনের
মণিকোঠায় শৈশবের দুর্গা উৎসবের সেই স্মৃতি আজও অমলিন। মহালয়ার প্রারম্ভে দুর্গা
পূজার শুভ সূচনায় সনাতনীদের যে আবেগ ও অনুভূতি কাজ করে সেগুলো সত্যিই ভোলার নয়। ছোট
থাকতে বেশ আগে থেকেই অনেক প্রস্তুতি থাকত মহালয়াকে ঘিরে। মহালয়ার আগের রাতে শুধু
প্রতিক্ষার প্রহর গুনতাম, কখন ভোর হবে? কখন মহালয়া দেখতে যাব? এই আনন্দে সেই রাতের
ঘুমটাও ঠিক মত হত না। তবে প্রতিবারই খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যেত বাবার রেডিও থেকে সর্বোচ্চ শব্দে ভেসে
আসা ‘বাণী জয়রাম’ এর চণ্ডীপাঠের সেই সুমধুর ধ্বনি শোনার মধ্য দিয়ে। চণ্ডীপাঠের সুর
শোনা মানেই বিছানায় শুয়ে থাকা আর সম্ভব হত না। একরকম তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে বাইরে বের হওয়া। আশপাশের সকল বাড়ি থেকে শোনা যেত
চণ্ডীপাঠের এই পর্ব।
চণ্ডীপাঠের পর্ব শেষ হওয়ার সাথে সাথে ‘কলকাতা দূরদর্শন’ থেকে টেলিভিশনে মহালয়ার দিন ভোরে দেবী দুর্গার আবির্ভাব সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত চলচিত্র প্রচারিত হত। যে চলচিত্রের ভিতর ‘পৃথিবী থেকে অশুভ শক্তির বিনাশে মহামায়া দুর্গাদেবীর আবির্ভাব’ সকলের কাছে ছিল এক অভূতপূর্ব ভালো লাগা। তাইতো বেশ আগে থেকেই ঠিক করে রাখতাম গ্রামের কোন বাড়ি নির্বিঘ্নে মহালয়ার অনুষ্ঠান দেখা হবে। কেননা, তখনকার দিনে সমগ্র গ্রাম জুড়ে ২-৩ জনের বাড়ি টেলিভিশন ছিল। আর আমাদের মত গ্রামের সকল ছেলে, মেয়ে, বউ, ঝি, বয়স্ক, তরুন সবাই এই মহালয়ার প্রভাতী অনুষ্ঠান দেখার প্রহর গুনত। তাই মহালয়ার সময়ে কোন রকমে কোণঠাসা হয়ে কখনো জানালার ফাঁক দিয়ে কখনো বা বেড়ার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকত সে দিনের ব্যাটারি চালিত সেই সাদাকালো টেলিভিশনের পর্দায়। সকল কিছু ছিল যেন এক অসাধারণ ভালো লাগা।
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।