ইউনিট ৭৩১- এক কালো অধ্যায়
ডাঃ আরিফুল হকঃ চীনে জাপানি আগ্রাসনের একটি ভয়ঙ্কর অধ্যায় ছিল। তা হলো চীনা নাগরিকদের ওপর মেডিকেল এক্সপেরিমেন্ট করা। জাপান রাসায়নিক এবং জীবাণু অস্ত্র নির্মানের জন্য গোপন পরিকল্পনা নিয়েছিল। গবেষণা কেন্দ্রটি ৭৩১ জন বিখ্যাত সদস্য নিয়ে গঠন করা হয়েছিল বলে এটি ইউনিট ৭৩১ নামে পরিচিত।
যেখানে বন্দিদের শরীরে প্লেগ ও কলেরার জীবাণু ইঞ্জেক্ট করা হত এবং মানবদেহে সেসব প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য জীবন্ত মানুষের ওপর কাঁটাছেঁড়া করা হত। এই হলো জাপানের অন্ধকার দিক। বিষয়টি আজও অনালোচিত। জাপান এককভাবেই ইউনিট ৭৩১ পরিচালনা করেছিল। ১৯৩৫ সালে চীনের উত্তর-পূর্বে হারবিন শহরের উপকন্ঠে ইউনিট ৭৩১ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত ছিল।
মনে থাকার কথা ১৯৩১ সাল। জাপানের রাজকীয় সৈন্যবাহিনী মাঞ্চুরিয়ায় অনুপ্রবেশ করে এবং সেখানে একটি পুতুল সরকার গঠন করে। জেনারেল শিরো ইশহি (১৮৯২/১৯৫৯) তৎকালীন জাপানের শীর্ষ মাইক্রোবায়োলজিস্ট। একে জীবাণু অস্ত্রের জনক বলে গন্য করা হয়। তবে ইনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। শিরো ইশহি ১৯৩২ সালে "Army Epidemic Prevention Research Laboratory" এর প্রধান নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে, অর্থাৎ ১৯৩৫ সালে মাঞ্চুরিয়ায় গোপনে ইউনিট ৭৩১ গঠন করে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের গবেষণা আরম্ভ করেন। এই উদ্দেশ্যে চীনা লোকজন বন্দি করে নিয়ে আসা হত। বন্দিদের বলা হত ‘লগ’ বা কাঠ।
কিছুদিন পর পর ৫০০ সিসি করে রক্ত নেওয়া হত বন্দিদের শরীর থেকে । রক্তশূন্য বন্দিদের ফ্যাকাশে দেখালে বিষাক্ত তরল ইঞ্জেক্ট করে মেরে ফেলা হত। পরে কাঁটাছেঁড়া করা হত, তারপর মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হত। শিরো ইশহির গবেষণার বিষয় ছিল এনথ্রাক্স, গ্ল্যান্ডারস ও প্লেগ এবং মানবদেহে এদের প্রতিক্রিয়া।
প্লেগাক্রান্ত ইঁদুরের শরীর থেকে ব্যাক্টেরিয়া
নিয়ে বন্দিদের শরীরে ইনজেক্ট করা হত। এর ১০ থেকে ১২ দিন পর বন্দিরা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জ্বরে ভুগত। তবে বন্দিরা বেশি বাঁচত না। জীবিত অবস্থায় তাদের কাঁটাছেঁড়া করা হত। কখনও
বন্দিদের শরীরে বিষাক্ত "Phosgene gas" ঢোকানো হত এবং প্রতিক্রিয়া দেখা
হত; কখনও ঢোকানো হত ১৫ মিলিগ্রাম সমপরিমাণ পটেশিয়াম সায়ানাইড। পরীক্ষার ফলাফল লিখে
রাখা হত। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে ইউনিট ৭৩১ এ মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৮০,০০০
তে!!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই গবেষণা গোপন রাখা হয়েছিল। কেননা মার্কিন সেনাবাহিনী তাদের গবেষণা উপা
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।