নুজহাত ফারহানা: ছেলেবেলায়
টেলিভিশান কিংবা পত্রপত্রিকায় দেখতাম একদল বুড়োমানুষ শুন্যে হাত তুলে, উপরের দিকে
তাকিয়ে হা-হা করে হাসছেন! তখন খুব হাসতাম, ভাবতাম “জোর করে হাসার কী আছে? হাসলে
আয়ু বাড়ে, তাই বলে অমন ভাঁড়ের মতন করে হাসতে হবে জোর করে?” হা হা! তখন কি আর
বুঝতাম যে, স্বাস্থ্য ভাল রাখাকে কেন্দ্র করে একটা জাতির জীবনধারা বা সংস্কৃতি এত
বিপুল আড়ম্বরে গড়ে উঠতে পারে?
বলছি
চীনদেশের উদ্যান সংস্কৃতির কথা! কী নেই তাদের প্রমোদ উদ্যানে? প্রথম প্রথম চীনে
এসে লেক, পাহাড়, জঙ্গল যেখানেই যেতাম, সব ক’টাকেই আমার পার্ক বলে মনে হত। ধীরে
ধীরে সমস্ত কার্যকলাপ বুঝে উঠতে লাগলাম। আহা, কী চমৎকার ব্যবস্থা!
সকাল
থেকে সন্ধ্যা অবধি চৈনিক পার্কগুলো একদম জমজমাট! এর মাঝে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে
বৃদ্ধ নারী-পুরুষদের কার্যক্রম। শরীর ভাল ও মনকে ফুরফুরে রাখার কী যে এক অসাধারণ
প্রচেষ্টা তাদের মাঝে! দেশে কোনদিন পার্কে দৌড়তে যাইনি ইভ টিজিং আর ছিনতাইয়ের ভয়ে।
অথচ এখানে রাতে পার্কের সদর দরজা বন্ধ হবার আগ পর্যন্ত থেকে যাই হাঁটতে বেরলে!
কোথাও কোথাও লেক, কোথাও বা পাহাড় আবার কোথাও বা জঙ্গলকে কেন্দ্র করেও পার্ক গড়ে
ওঠে এই দেশে। সবই এক স্বাস্থ্যসচেতন জীবনধারাকে উৎসাহ দেবার জন্যেই বুঝি! আমাদের
দেশে চল্লিশোর্দ্ধ মা-খালাদের জীবনে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর বিনোদনের আর কোন
সুযোগ থাকে না। হয় ভাত খেয়ে ঘুম দেন নতুবা টিভি খুলে হিন্দি সিরিয়াল দেখেন।
বেশিরভাগ বাড়ির চিত্রই কিন্তু তা বলে। বয়েস হবার আগেই যেন বুড়িয়ে যান অনেকে। সত্যি
বলতে, আমাদের দেশে কী শিশু, কী বয়োঃ, কী বৃদ্ধ, কারও জন্যেই কিন্তু সুস্বাস্থ্য
নিশ্চিতকারী বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই। আর চীনদেশে? ষাটোর্দ্ধ দাদিমাকে দেখেও মনে
হবে বড়জোড় ৪৫ বছরের কেউ! কেমন করে? বলছি।
ছবিঃ ঐতিহ্যবাহী নাচের অনুশীলন করছেন প্রবীণারা
অনেকেই
সকালবেলায় পার্কে আসেন পোষা প্রাণীর সাথে নিজেও একটু হেঁটে নেবেন বলে। আবার কেউ
কেউ আসেন বাজার করে বাড়ি ফেরার আগে সারাজীবন ধরে শিখে আসা মার্শাল আর্ট,
ঐতিহ্যবাহী নাচ ইত্যাদি সকালবেলায় একটু ঝালাই করে নিতে। সপ্তাহে কোনদিনই যেন এর
হেরফের নেই। আপনি চাইলে যেকোন এক দলের সাথে ভীড়ে গিয়ে উপভোগ করতে পারেন এই অসম্ভব
ভাল লাগার চর্চাগুলোকে। ছবিঃ ওয়াটার ক্যালিগ্রাফি করছেন দাদু
এ তো গেল
সকালবেলার কথা। বিকেলে বের হলে দেখবেন জমজমাট ব্যাপার কাকে বলে! শারীরিক চর্চার
পাশাপাশি তখন চলে সাংস্কৃতিক অনুশীলন ও প্রদর্শনী! পার্কের এক লাইন ধরে পাওয়া যাবে
ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও স্যুভেনিরের দোকান, সেই সাথে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা আদিবাসী
ফটো স্টুডিও। সেখানে মাত্র ১০ ইউয়েন দিয়ে আদিবাসী পোশাক পরে ছবি তুলিয়ে নিতে
পারবেন তাদের দিয়ে। ভেতরে আরও আছে নান্দনিক রেস্তোরাঁ। অনেকসময় রেস্তোরাঁর দালানে
ঝুলতে থাকা লণ্ঠনগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেয়া যায়! আরও রয়েছে চা শিল্পের
প্রদর্শনী, ফ্রি জিম ফ্যাসিলিটি, তলোয়ার নাচ ও লায়ন/ড্রাগন ড্যান্সের প্রদর্শনী!
কী নেই?
ছবিঃ
বাংলাদেশ-চীন ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের
সদস্য হতে ক্লিক করুন
এখানে
BCYSA.ORG
এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ
অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর
ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল :
news.bcysa@outlook.com।