আমাদের চীনে আসার গল্প
অজয় কান্তি মন্ডলঃ ভোরের আলো ফুটতেই বাড়িতে অনেক
মানুষের আনাগোনা। সকালেই আমরা
বাড়ি থেকে চীনের উদ্দেশ্যে রওনা দেব এমনটায় সবার জানা সেজন্য সবাই বিদায় জনিত দেখা
করতে এসেছে। মাসতুতো ভাই গোপাল এসে প্রাইভেট কারের (ভাড়াকৃত) চালককে কল করতেই গাড়ি
চলে আসল। গাড়ী দেখেই মায়ের উচ্চস্বরে কান্না। মায়ের কান্না সেই শুরু হয়েছেলি বেশ
কয়েকদিন আগে থেকেই। কিন্তু ওই দিনের সকাল থেকে লাগাতার ভাবে মা কান্না করেই চলছিল। একটু বকাবকি
করেই মায়ের কান্না থামালাম। তড়িঘড়ি করে সকালে নাস্তা সেরে তৈরি হলাম। বুঝলাম যত
দেরি করব এই কান্নার পাল্লা ততই ভারী থেকে ভারীতর হবে। তাই হীরাকে (আমার স্ত্রী)
দ্রুত রেডি করে দাদাবাবু দের লাগেজগুলো নিয়ে গাড়িতে উঠাতে বললাম। চাকুরীর সুবাদে
ঢাকায় ছিলাম তাতেই মা-বাবার পরান ছিড়ে যেত আর আজ বউ বাচ্চা নিয়ে রওনা
দিচ্ছি সুদূর প্রবাসে। কান্না কাটি
বেশি হবে সেটায় স্বাভাবিক।
আমাদের বিদায় উপলক্ষে পাড়ার দাদা-বৌদি, কাকিমা-জ্যাঠিমা, কাকা-জেঠা, পিচ্চি-পাচ্চা সবাই এসেছে। অন্য সময়ও তারা আমাদের বাড়ি আসে কিন্তু সেদিনের আসাটা একটু অন্যরকম ছিল। সবাই মনমরা, সবার মুখে প্রশ্ন আর কতদিন পরে দেশে আসব? চীনে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে? কখন প্লেনে উঠব আর কখন পৌঁছাব? নিজেরও অনেক খারাপ লাগছিল। শুধুই মনের ভিতর বারবার উঁকি দিচ্ছিল নানান প্রশ্ন। জানিনা আবার কবে গ্রামের এসব সহজ সরল মানুষ গুলোর সাথে দেখা হবে! কবে আবার গ্রামে এসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারব! মায়ের হাতে রান্না খেতে পারব! পারবতো এই দুর্গম পথ সফলতার সাথে পাড়ি দিয়ে আবার সবার কাছে ফিরে আসতে? এসব নানান প্রশ্নের বাণে বেশ কয়েকদিন ধরেই নিজের বিবেককে নিজের কাছেই জর্জরিত হতে হচ্ছিল।
ছবিঃ বাড়ী থেকে রওনা দিয়ে খুলনার
উদ্দেশ্যে।
আসার আগে সবাইকে বলে এসেছিলাম
আমার মা-বাবা কে দেখে রেখ। সুবিধা-অসুবিধায় তোমরা তাদের খোঁজ নিও। কেননা প্রতিবেশী
ছাড়া বাড়িতে তাদের দুজনকে দেখার যে আর কেউ নেই। এসব বলে সবার থেকে একে একে বিদায়
নিলাম। এরপর ঠাম্মা, মা-বাবা, দিদি-দাদাবাবু সহ
অন্য সবার থেকে বিদায় নেওয়ার পালা। সেমুহূর্তে আর নিজের আবেগকে ধরে রাখতে পারলাম
না। কেন জানিনা
বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুব চিৎকার করে কেঁদে দিলাম। দিদি, বোন, হীরা সবাই
BCYSA.ORG
এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ
অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর
ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল :
news.bcysa@outlook.com।