সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট : দ্য নিউ নরমাল
নুজহাত ফারহানা: ‘সারভাইভাল অব
দ্য ফিটেস্ট’ – শব্দ ক’টা সাজিয়ে গিয়েছিলেন হার্বার্ট স্পেন্সার। শুনলেই কেমন একটা
আশির্বাদের মত শোনায়! কিন্তু করোনার এই দুর্যোগকালে এই শব্দবিন্যাস কি আসলেই
আশির্বাদকে নির্দেশ করে? নাকি এটা ভাগ্য অতি সুপ্রসন্ন হবার লক্ষণ! যা বলেই ডাকি
না কেন, এটাই এখন নরমাল। দ্য নিউ নরমাল!
প্রায় এক বছর হতে চলল, পৃথিবী
এক দারুণ দুর্যোগে পড়েছে! কী এক ভাইরাস এসে নিশ্চিহ্ন করে ফেলছে জীবনের নিশানা!
ইতিহাসে বারবারই ঘটেছে এ দুর্যোগ। তবে মানবসভ্যতার উৎকর্ষের এমন ‘ফিটেস্ট’ পর্যায়ে
এসেও যে এমন করে ‘সারভাইভাল’-এর পরীক্ষা দিতে হবে, তা বোধ হয় আমরা কেউই আগে ভেবে
দেখিনি!
শুরুতে যখন উহান থেকে খবর এল
নতুন এক জীবন সংশয় ঘটানো ভাইরাসের আবির্ভাবের, বিশ্বাস করিনি। ভেবেছিলাম গুজব!
মাত্র এক সপ্তাহ আগেই দেশে ফিরেছি। মাসখানেক পরেই ফিরে যাবার ইচ্ছে। অনেক কাজ বাকি
যে! এমন করে ভাইরাস ছড়ালে কী করে হবে!
না, গুজব তখন সিরিয়াস। খুব ভয়,
খুব আফসোস আর খুব মন খারাপের মিশেল একটা অনুভূতি তখন কাজ করছে মনে। তখন থেকেই
জানতাম, এ ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচবে না কোন দেশই। একটা দুঃস্বপ্নের মত লাগত
সবকিছু। ঢাকার বাতাস বিষাক্ত জেনে কিছু মাস্ক কিনে এনেছিলাম, সে মাস্ক যে এখন অন্য
কারণেও কাজে লাগাতে হবে ভাবলেই পাগলের মত লাগত। মনে মনে ভাবতাম, এ জিনিস আমার দেশে
প্রবেশ করলে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকবে লাশ, অভাবে রান্নার চাল থাকবে না অনেক ঘরে, আর
কোনদিন মনের সুখে ঘুরে বেড়ানো হবে না, পারব না বন্ধুকে জড়িয়ে ধরতে কিংবা থামবে না
লকডাউন! চায়না ফেরা তো দূর-কি-বাত!
কোভিড-১৯ বাংলাদেশেও এসেছে।
ফলাফল যা হবার, হয়েছেও তা-ই। না, রাস্তাঘাটে লাশ পড়ে থাকতে দেখার মত দুর্ভাগ্য হয়
নি, কিন্তু হারিয়ে ফেলা প্রিয়মুখগুলোকে আর কোনদিনও খুঁজে পাব না। আমরা যারা টেবিলে
নিত্যদিন নানাপদের সমারোহে এখনও আগের মতই ঝোলে-অম্বলে ভালই আছি, তারা কোভিডের
আকালে হঠাৎ কাজকর্ম হারিয়ে ফেলা দুর্ভাগাদের হাহাকার কোনদিনও টের পাব না!
তবে কোভিডের কিছু আশির্বাদও
কিন্তু আমরা দেখতে পাই। লকডাউন উঠে গেছে অনেকদিন। অনেকদিন কাজকর্ম বন্ধ থাকায়
ক্ষতিও হয়ে গেছে বেশ। কিন্তু বাইরের পণ্য আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পণ্যের দিকে নতুন
করে ঝুঁকেছে উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। লকডাউন ও লকডাউন পরবর্তী সময়ে এখনও
পর্যন্ত ঠিক কতজন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, তার কোন জরিপ হয়েছে কিনা, তা আমার
জানা নেই। তবে কথার কথা বললে বলা যায়, আজকাল ১০ ঘরে খোঁজ করলে ৭ ঘরেই দেশী পণ্যের
উদ্যোগ খুঁজে পাওয়া যাবে। জামদানী, মণিপুরী, টাঙ্গাইল, গামছা, মধু, সরিষা, পিঠা,
ঘরে বানানো খাবার, আয়ুর্বেদিক, চর্মশিল্প, ডিজাইনার জামাকাপড়, ফ্যাশন পণ্য,
হস্তশিল্প কী নেই! এর মাঝে কত ব্যবসা টিকে থাকবে, বা এখনও ঝরে পড়েনি, সেটা কথা নয়।
দেশী পণ্য তার হারানো গরিমা ফিরে পাচ্ছে, এর বেশি আনন্দ আর কীসে হতে পারে?
ইনোভেশনও আজ কম হচ্ছে না।
আজকাল অনলাইনে পড়াশোনা করছি আমরা সবাই। অন্তর্জালের এত অর্থবহ ব্যবহার এর আগে কখনো
ঘটেনি। এদিক মাথায় রেখে শিক্ষাখাতে প্রচুর নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে তরুণ
উদ্যোক্তারা। স্বাস্থ্যখাতেও ইনোভেশন এগিয়েছে সমান তালে। চিকিৎসাসেবা কিংবা ঔষধশিল্পও
আজকাল অনলাইনভিত্তিক হয়ে উঠেছে বেশ ভালভাবেই।
সারাবিশ্ব যেখানে ই-কমার্সে এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ যেন এতকাল একটু পিছিয়েই ছিল। তবে এখন ‘বুম’ হয়েছে কথাটা বোধ হয় বলাই যায়। এফ-কমার্স ব্যবসায়ীরা আজকাল ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকছেন বেশ আগ্রহ নিয়েই। নামকরা সাইটগুলোর কথা আর নাই-বা বললাম। দুর্নাম থাকতে পারে অনেক ক্ষেত্রেই, কিন্তু কোভিডের সুযোগ কাজে লাগিয়েছে সবাই-ই। ত
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।