আমাদের চীনে আসার গল্প (শেষ পর্ব)
অজয়
কান্তি মন্ডল: যেমনটা ভেবেছিলাম ঠিক তেমনটাই হল। ওরা কেউ কিছুই
খেলনা। অন্তু খুব আশা করে থাকলেও এক চামচ নুডুলস মুখে দিতেই ওর রুচি
নষ্ট হয়ে গেল। হীরা এবং নীলিমা মাংস খায়না সেই সুবাদে ওরা ওটা খুলেও দেখলনা। অন্য
প্যাকেটে দেওয়া ফল, জেলি, দই এসব খেয়েই ওরা খুশি থাকল। আমি যতদূর পেটে ধরে খেয়ে
বাকিটা অপচয় করলাম। ৩ ঘণ্টা ২০
মিনিটের ভ্রমনে ভারী খাবারের পরে আরও একবার জুস সহ কোমল পানীয় নিয়ে বিমান বালারা
হাজির হল। এরপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হল। আমি এককাপ ধোয়া ওড়া কফি নিয়ে ফু দিতে
দিতে হালকা চুমুক দিলাম। ভালোই ঠান্ডা লাগছিল সবার। আশপাশের সব যাত্রী কম্বল গায়ে
দিয়ে সবাই বসার চেয়ারটা হালকা হেলিয়ে দিয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করছে। আমি অন্তুকে
ঘুমানোর জন্য কম্বল দিয়ে একটু আরাম করে দিতেই ও ঘুমিয়ে গেল। ঘুমানোর পরিবেশকে
উপযুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে বিমানের সব আলো প্রায় নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই
ঘুমিয়ে গেছে, কেউ আবার অকাতরে ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে। আমাদের পেছনের কয়েক আসন পরেই
শুনতে পেলাম কারও জোরে জোরে নাক ডাকানোর শব্দ। স্ক্রিনে দেখাচ্ছে বিমান তখন ৩৫,০০০
ফুট উপর দিয়ে ৬০০ কি.মি. বেগে ছুটে চলছে। মাঝে মাঝে হালকা পাতলা ঝাঁকুনিও হচ্ছে।
তাই বিমানের ঘুমটা আমার কাছে কোনবারই আরামদায়ক হইনি। চোখ বন্ধ করতে গেলেই মনের
ভিতর আতঙ্ক কাজ করে না জানি কখন কি হয়ে যায়। তাই সবাই ঘুমিয়ে গেলেও আমি ঘুমাতে
পারিনা। কিন্তু ওইদিন কেন জানিনা আমিও ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম
ভাঙল বিমানের জানালা দিয়ে পূব আকাশে উঁকি দেওয়া লাল টকটকে সূর্যের আবছা আলোর ছটায়।
তখন মাত্র ভোর হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চালক সব ঘোষণা শেষ করে বিমান অবতরনের প্রস্তুতি
নিচ্ছে। তাই আবারো সব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বন্ধ সহ সিটবেল্ট বাঁধার ঘোষণা
ইতোপূর্বে শেষ করা হয়েছে। ঘুমানোর আগে আমরা সবাই সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে ঘুমানোর
কারণে আমাদের আর নতুন করে সিট বেল্ট পরা লাগেনি।
আমি জাগলেও দেখলাম পুরো বিমান ভরা সবাই এখনো অকাতরে ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণের
ভিতর বিমান মাটি স্পর্শ করাতে বিমানে যখন হালকা ঝাকুনি হল তখন সবাই নড়ে চড়ে ঘুম
ভেঙে বসল কেননা এবার নামার পালা। চালক সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে গুয়াংজু বিমান বন্দরের সার্বিক
আবহাওয়া, তাপমাত্রা এ বিষয়ে অবগত করে ওনার দায়িত্ব শেষ করলেন।
বিমান নির্দিষ্ট টার্মিনালে আসার আগেই সবাই যার সেই সিট বেল্ট খুলে নিজেদের ব্যাগ
নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরাও সবাই নিজেদের ব্যাগগুলো হাতের কাছে আনার
চেষ্টা করতে লাগলাম। অন্তু তখনও অকাতরে ঘুমাচ্ছে। ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে ঘুম
থেকে জাগিয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা সবাই।
গুয়াংজু বিমান বন্দরে বিমান অবতরনের নির্ধারিত সময় ৬.১০ মিনিট হলেও আমরা ১৫ মিনিট আগেই গুয়াংজু নিরাপদে অবতরন করলাম। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ফুজিয়ান প্রদেশের ফুজো চাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। গুয়াংজু থেকে সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের প্রতিদিন ৩-৪ টা কানেক্টিং ফ্লাইট যাতায়াত করে ফুজিয়ান পর্যন্ত। শুধুমাত্র টিকিটের মূল্য তুলনামূলক একটু সাশ্রয়ী হওয়ায় কিছু সময় হাতে রেখেই আমরা দুপুর একটার দিকের গুয়াংজু থেকে ফুজোর ফ্লাইটে টিকিট করেছিলাম। সেজন্য গুয়াংজু আমাদের প্রায় ছয় ঘন্টার মত ট্রানজিট (পরবর্তী বিমানে ভ্রমণের জন্য যাত্রা বিরতি) ছিল। আগের ফ্লাইট গুয়াংজু আসা মাত্রই অন্তুকে ঘুম থেকে জোরাজুরি করেই জাগিয়ে তুলেছিলাম। গত কয়েকদিন ধরে অন্তুর ঘুমের বেশ ঘাটতি থাকায় ওর মায়ের নিষেধকে অমান্য করেই আমি জোর করে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।