“দ্যা বাটারফ্লাই লাভারস” (লিয়াং ঝু): চীনা অনবদ্য প্রেম কাহিনী (রোমিও জুলিয়েট চীনা সংস্করণ)
আগা মোস্তাফিজুর রাহমান চৌধুরীঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কালজয়ী বিয়োগাত্মক উপন্যাস রোমিও জুলিয়েট সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি জানি, যা ভালোবাসার এক অনবদ্যও কাহিনী, সাহিত্যিক মূল্যায়নে যা এক অন্যন্য সৃষ্টি, যুগ যুগ ধরে যা মানুষের মুখে আলোচিত। তদ্রুপ চীনা মানুষের মুখে-মুখে প্রায়শই শুনা যায় এমনি অসংখ্য প্রাচীন চীনা প্রেমকাহিনী, যার বেশিরভাগ হচ্ছে লোককাহিনী, পুরাকথা, কাল্পনিক। এছাড়া রয়েছে বেশ কিছু সাহিত্যকর্ম এবং কিছু বাস্তবধর্মী গল্প। যার বেশিরভাগ গল্পই বিয়োগাত্মক বা ট্র্যাজিক গল্প, অবশ্য কিছু ভাববিলাসী মিলনান্ত গল্পও রয়ছে। এই লিখনিতে মুলত “দ্যা বাটারফ্লাই লাভারস” বা লিয়াং ঝু উল্লেখ্যযোগ্য একটি চীনা বিয়োগাত্মক প্রেম কাহিনী যা সংক্ষিপ্ত আকারে বাংলায় অনুদিত করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করা হয়েছে। এই গল্পটি যুগ যুগ ধরে চীনা মানুষের কাছে প্রেম ও ভালোবাসার মাহাত্ম্য প্রকাশ করে আসছে।
দ্যা বাটারফ্লাই লাভারস একটি বিখ্যাত চীনা লোককাহিনী। এটি লিয়াং শানবো এবং ঝু ইয়িংথাই যুগলের একটি বিয়োগাত্মক প্রেম কাহিনী, যা চীনা মানুষের কাছে রোমিও এবং জুলিয়টের চীনা সংস্করণ হিসাবে বিবেচিত হয়। গল্পটি রোমিও এবং জুলিয়টের পুরোপুরি অনুরুপ নয়; বরং সামজিক কৃষ্টি কালচার ও প্রেক্ষাপটের ভিন্নতা আরও বেশি নাটকীয়, যা গল্পটিকে বেশিরভাগ গল্প ও রূপকথার থেকে আলাদা এবং সম্পূর্ণ স্বকীয় করে তুলেছে।
গল্পটি মূলত জিন (Jin) রাজবংশের (৩১৩-৪২০) সময়কালের কথা। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় মেয়দের গৃহের অর্গলমুক্ত হয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ ছিল না। ধনী পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও ঝু ইয়িংথাইয়ের জন্য স্কুলে যাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিদ্যোৎসাহী নারী, অত্যন্ত বুদ্ধিমতি এবং জ্ঞানের প্রতি ছিল তার প্রগাড় আগ্রহ।
তাই তাকে স্কুলে পাঠানোর জন্য তিনি পিতা-মাতাকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন। মেয়ের স্কুলে পড়ার প্রতি প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা তার কঠোর বাবার মনকেও দুর্বল করে তুলে, এবং শেষ পর্যন্ত
তিনি তাকে স্কুলে পাঠাতে সম্মত হন। অবশেষে, পিতা-মাতার সমর্থন ও সহায়তায় তিনি পুরুষ ছদ্মবেশে অধ্যয়নের জন্য সুদূরের তৎকালীন ছিয়েন থ্যাংক নামক (যা আজ হ্যাংজু হিসাবে পরিচিত) স্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
অতঃপর, খুব শীঘ্রই ঝু হ্যাংজুয়র উদ্দ্যেশে তার সুদীর্ঘ যাত্রা শুরু করেন। নিজ শহর থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে প্রথম যে মানুষটির সাথে পরিচয় হয়, তিনি ছিলেন লিয়াং শানবো। প্রথম পরিচয়ে এবং আলাপাচারিতার একটি পর্যায়ে জানা গেল প্রকৃত অর্থে, দুজনেই একই স্কুলের উদ্দ্যশ্যে যাচ্ছিলেন। সুদীর্ঘ এই যাত্রায় ঝু এবং লিয়াং একে-অপরের ভাল বন্ধু হয় উঠেন।
পরবর্তীতে, ঝু ইয়িংথাই ও লিয়াং শানবো প্রায় তিন বছর হ্যাংজহুয়র সোংশান একাডেমিতে একসাথে অধ্যয়ন করেন। তারা একাডেমির একই ছাত্রাবাসে রুমমেট হিসাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর অতিবাহিত করলেও লিয়াং শানবো কখনোই বুঝেননি ঝু ইয়িংথাই প্রকৃতপক্ষে একজন নারী। পক্ষান্তরে যতই সময় অতিবাহিত হচ্ছে ঝু শীঘ্রই বুঝতে পারলেন তিনি ধীরে ধীরে তার সবচেয়ে নিকটতম বন্ধু লিয়াংয়ের প্রেমে পড়তে শুরু করেছেন।
যদিও তখন পর্যন্ত কেউই ঝু ইয়িংথাইয়ের আসল পরিচয় আবিষ্কার করতে পারেনি, তাই ঝু মনে মনে এই সিদ্ধান্ত নিয়ছিলেন যে লিয়াং কে তার গোপন ছদ্মবেশের কথা বলবেন এবং তার প্রতি নিজের ভালোবাসা ও অনুভূতির কথাও প্রকাশ করবেন। কিন্তু, একদা তার পিতার শারীরিক অবস্থা ভাল নয় বলে পরিবার থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে বাড়ি ফিরে যাবার বার্তা পান ঝু ইয়িংথাই। তাই কোনরূপ বিলম্ব না করেই ঝু পরিবারের আদেশনুযায়ী নিজ গৃহে ফিরে যাবার জন্য মনস্থির করলেন। সব শুনে ব্যথিত হৃদয়ে লিয়াং তার প্রিয় বন্ধুকে বিদায় জানাতে হাজির হন। ঝু ইয়িংথাইও তার ভালবাসার কথা প্রকাশ না করেই তারা একে অপরকে বিদায় জানায়। ঝু মন থেকে চাচ্ছিলেন বন্ধু লিয়াং তাকে কিছুটা পথ এগিয়ে দিক। লিয়াংও সেদিন প্রকৃত অর্থে তার সেরা বন্ধুকে খুব সহজে বিদায় জানাতে পারছিলেন না। তাই প্রিয় বন্ধুকে ১৮ মাইলের অধিক পথ পায়ে হেটে এগিয়ে দেন। তাদের সেই ঐতিহাসিক ১৮ মাইলের দীর্ঘ পথ চলার বিখ্যাত দৃশ্য 十八里相送 (শি পা লি শিয়াং সোং) নামে পরিচিত।
এই লম্বা সময়ে ঝু বিভিন্ন কায়দায় অসংখ্যবার আকার-ইঙ্গিতে লিয়াং শানবোকে বুঝাতে চেয়েছেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন নারী। এমনকি একপর্যায়ে হাস্যরসিকতার ছলে ঝু বলেছিলেন তার একটি সুন্দরী ছোটবোন আছে যে দেখতে হুবহু তারই মতো। যদি লিয়াং চায় সে তাদের বিয়ের ঘটকালীর দায়িত্ব নেবে। আসলে ঝু ছিলেন ধনী বাবার একমাত্র সন্তান। তার কোনো সহদর ছিল না।
পুরো ১৮ মাইল পথ জুড়ে ছিলও এমনি অসংখ্য ইঙ্গিতপূর্ণ কথা, তবে লিয়াং শানবো কথাগুলোর প্রকৃত অর্থ আবিষ্কার করতে ব্যর্থ ছিলেন। তার ইঙ্গিতপূর্ণ কথাগুলো উপলব্ধিই করতে পারেননি।
অবশেষে ঝু বাড়ি ফিরে আসার কিছু দিন পরেই জানতে পারেন, তার পরিবার মুলত একটি ধনী ও সম্রান্ত পরিবারে তার বিয়র ব্যবস্থা করেছেন। তখন ঝুয়র কাছে পিতামাতার কথা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না এবং ঝু ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন এখন কেবলমাত্র যে কাজটি তিনি করতে পারেন তা হলো লিয়াংকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা এবং তার প্রতি নিজের ভালোবাসার কথাও প্রকাশ করা।
এদিকে, লিয়াংও তার প্রিয়বন্ধুর অপেক্ষায় ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। এভাবে একদিন হঠ
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।