
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ডঃ ইউনুসের চার দিনের চীনে রাষ্ট্রীয় সফর।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানডঃ ইউনুসের আগামী ২৬ মার্চ চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীন যাচ্ছেন। এই সফর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি বিশ্বমানের উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করা, এবং এই প্রেক্ষাপটে চীনের কারখানাগুলোকে বাংলাদেশে স্থানান্তরিত করার বিষয়টি এই সফরের প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে চলেছে।
এই সফরের পূর্বে গত ১৭ মার্চ, ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের
রাষ্ট্রদূত ওইয়াং ইউজিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. ইউনুস। বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
এক সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনুসের প্রেস সচিব শফিক আলম এই সফরের ঘোষণা করেন। তিনি জানান,
এই সফরে ড. ইউনুস আগামী ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক
আলোচনায় অংশ নেবেন। বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা হবে।
প্রেস সচিব আরও জানান, গত ৮ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের
দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ড. ইউনুসের প্রথম দ্বিপাক্ষিক চীন সফর। সফরকালে তিনি আগামী
২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশের বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন।
শফিক আলম বোয়াও ফোরামকে "প্রাচ্যের দাভোস" হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই সম্মেলনে
এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও বৃহৎ কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা অংশগ্রহণ
করবেন। আমরা আশা করছি, ড. ইউনুস এই ফোরামে চীনের এবং অন্যান্য দেশের বৃহৎ কোম্পানির
প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করতে সক্ষম হবেন।
এছাড়াও, ড. ইউনুস বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতা দেবেন
এবং সেখানে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। সফরের কর্মসূচিতে চীনের
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পার্কগুলো পরিদর্শনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বৃহৎ কোম্পানির প্রধান
নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনায় ড. ইউনুস বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করার কৌশল
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। প্রেস সচিবের মতে, ড. ইউনুসের এই সফরের মূল উদ্দেশ্য
হলো বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।
বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই বছর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের
৫০ বছর পূর্তি হওয়ায় এই সফর উভয় পক্ষের জন্যই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রেস সচিব
আরও জানান, এই সফরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো চীনা কোম্পানিগুলোকে
বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থানান্তরে উৎসাহিত করা। গত বছর জাতিসংঘ সম্মেলনে ড. ইউনুস
চীনা নতুন জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার
এই আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে এবং ইতিমধ্যেই দুটি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের
কার্যালয় স্থাপন করেছে এবং সৌর শক্তি খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্য
সুরক্ষাবাদের কারণে অনেক ক্ষেত্রে চীনা সৌর কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধার
সম্মুখীন হলেও বাংলাদেশে তারা কোনো প্রকার বাধার সম্মুখীন হবে না। চট্টগ্রাম বন্দরের
নির্মাণ সক্ষমতা দ্রুত করার বিষয়টিও এই সফরে আলোচিত হবে।
শফিক আলম আরও জানান, চীনা রাষ্ট্রদূত বৈঠকে উল্লেখ করেছেন যে, গত ৫ আগস্ট,
২০২৪ তারিখে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় চীনা কোম্পানিগুলোই
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে। আমরা আশা করছি, এই সফরের পর আরও বেশি সংখ্যক
চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে।
এই সফর নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে
আরও মজবুত করবে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা
করা যায়।
Arif/Raoha
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।