
ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক উত্তরোত্তর উন্নয়নের নতুন আভা

বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্প্রতি চীনের বিখ্যাত পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় (PKU) সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক উদ্ভাবনে তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০২৫ সালের ২৯ মার্চ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়।
ড. ইউনূস বিশ্বব্যাপী "ক্ষুদ্রঋণ" এবং "সোশ্যাল বিজনেস"-এর জনক হিসেবে পরিচিত। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করতে তিনি অভিনব অর্থনৈতিক মডেল প্রবর্তন করে সারা বিশ্বের কোটি মানুষের জীবনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিনা জামানতে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী একটি বিপ্লবী আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই উদ্যোগ দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রকে আমূল বদলে দিয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের চীন সফরের সময় বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও গভীর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এই সফরে উভয় দেশের মধ্যে নয়টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মধ্যে ছিল গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমঝোতা স্মারকও (MOUs)। এছাড়াও বিনিয়োগ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক আলোচনা, চীন শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু এবং মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের জন্য বাণিজ্যিক চুক্তিসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব পদক্ষেপ দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতীক।
ড. ইউনূস বিশ্বের ইতিহাসে বিরল কয়েকজন ব্যক্তিত্বের একজন, যিনি একইসঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কার , প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি এশিয়ার নোবেল হিসেবে পরিচিত রামোন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর শান্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারের কারণে তাঁকে ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকের মশাল প্রজ্জ্বলক হিসেবে সম্মানিত করা হয়।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ এই সম্মানসূচক ডিগ্রিটি ছাড়াও তাঁকে অভাবনীয় এবং উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বের ২০ টিরও অধিক দেশের ৫০ টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরাল ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় , কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো, যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি উল্লেখযোগ্য।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত আন্তরিকতা ও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট, বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং সেখানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ড. ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। সম্মাননা গ্রহণের পর ড. ইউনূস কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একটি অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্য দেন, যেখানে তিনি সোশ্যাল বিজনেস ও টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়ে তাঁর মূল্যবান চিন্তা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সম্মানসূচক ডিগ্রি ড. ইউনূসের বৈশ্বিক প্রভাবকে যেমন তুলে ধরেছে, তেমনিভাবে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রতীক হিসেবেও কাজ করছে।
Arif/Raoha
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।