করোনাকালীন চীনে আমার জীবনের স্মৃতিকথা
মাঈন উদ্দিনঃ ২০১৯ এর সেপ্টেম্বর মাসে উচ্চশিক্ষার জন্য চীনে এসেছিলাম। এরপর প্রথম এক সেমিস্টার বেশ ভালোভাবেই কেটে যায়। চীনকে জানা, এর নিয়মকানুন, ভাষা, সংস্কৃতি বুঝা এসব নিয়ে বেশ আমোদে সময় কেটেছিলো। তারপর শুরু হলো শীতকালীন অবকাশ। একদিকে জানুয়ারীর তীব্র ঠান্ডা আর সাদা তুষারাবৃত প্রকৃতি অন্যদিকে কানে আসছিলো নতুন এক মহামারী ভাইরাসের কথা। তখনো ভাবিনি, যে পৃথিবী প্রযুক্তিগতভাবে এতো এগিয়ে, যে মানুষগুলো অণু-পরমাণু জয় করেছে তারা এই অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে হার মেনে নিবে, থমকে যাবে পুরো বিশ্ব।
পৃথিবী তখনো ভাবেনি ভাইরাস এতোটা মারাত্মকভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়ায়। প্রথমদিকে আমার অনেক আত্মবিশ্বাস ছিলো। ভাবতাম, যে সুপার পাওয়ার দেশগুলো একটি বোমা দিয়ে নিমিষেই পৃথিবী ধ্বংসের ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে, তাদের হয়ত একটি ভাইরাস মারার ভ্যাক্সিন বানানো ক্ষণিকের ব্যাপার মাত্র। এ আর এমন কী!! কিন্তু আমি হয়ত ভুল ছিলাম। কারণ করোনা প্রতিনিয়ত প্রাণ কেড়ে এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর বুকে।
ফেব্রুয়ারীর পর থেকে ঠান্ডাও কমতে থাকে আর চীনের অবস্থা তখন ক্রমশ খারাপ হচ্ছিলো। এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে অনেক বন্ধুই হাই-হুতাশ করছিলো। অনেকেই নিজ নিজ দেশে ফিরে যায়। কিন্তু পরিবারের অনেক আকুতির পরেও প্রথম থেকেই আমার দেশে ফিরে যাওয়ার কোন আগ্রহ ছিলোনা। চীনের এমন নাজেহাল খবর শুনে সবার আবেগ ছড়ানো কান্নায় আমি এই বলে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম যে, "যদি আল্লাহ না চায়, ভাইরাসের ক্ষমতা নেই ছড়ানোর। আর মানুষের ক্ষমতা নেই এর থেকে পরিত্রাণের।"
আমি একটু অন্তর্মূখী স্বভাবের, যার ফলে দীর্ঘ সময় নিজ রুমে বসে একাকী সময় কাটাতে মোটেও বিরক্ত হইনি। যদিও বর্তমানে চীনে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং আমাদের শিক্ষা-কার্যক্রমও আগের মতো সচল হয়েছে। কিন্তু সেই ফেব্রুয়ারীর পর থেকে ক্যাম্পাসের বাইরে আজ পর্যন্ত যেতে পারিনি। আসলে, চীনে করোনার জন্ম এবং পরবর্তীতে চীনের করোনা জয়ের ব্যাপারে অনেক উপকথার জন্ম হলেও আসল ব্যাপারটা হলো, এখানে জনগন সরকারকে এতোটাই মান্য করে যে, যেদিন থেকে লকডাউন শুরু সেদিন থেকে রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। সরকার এতো দ্রুতই পদক্ষেপ নিয়েছে যে, চীনের মতো জনবহুল বিশাল দেশে করোনা সুযোগ করতে পারেনি।
এই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের
কথায় ধরুন, এখানে ফেব্রুয়ারি থেকেই আমাদের নিজ বিল্ডিংয়ের
বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হলো, পেট্রোল পুলিশ নিয়োগ দেওয়া
হলো, অনলাইন শপিং বন্ধ করা হলো আর প্রতিটি ডর্মিটরিতে
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্য দোকান দেওয়া
হলো,
BCYSA.ORG
এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ
অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর
ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল :
news.bcysa@outlook.com।