একজন মুসলিম হিসেবে চীনে যেমন ছিলাম
যখনই আমি নিজের পরিচয় দেই যে আমি চীনে পড়াশোনা করছি, বেশিরভাগ সময় আমি একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। এমনকি আত্মীয়স্বজন, পরিচিতজন, বন্ধুবান্ধব এবং প্রায় সবাই একই প্রশ্ন করেছিল। "আমি শুনেছি যে চীনে মুসলমানদের অবস্থা খারাপ। চীনে মুসলমান হয়ে আপনি কি কোন সমস্যায় পড়েছেন?" আসলে প্রশ্নটা একটু বিব্রতকর। আমার যে অভিজ্ঞতা সেভাবেই সবাইকে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি সবসময়ই। মুসলিমদের নিয়ে চীনের ভাবমূর্তি এখন সারা বিশ্বে একটু নেতিবাচকই, তাই হয়তো সবাই এমন প্রশ্ন করেন। যাইহোক, আমি ২০১৮ সাল থেকে চীনে অধ্যয়ন করছি এবং বর্তমানে করোনার কারণে বাংলাদেশে আছি। যতদিন চায়নাতে ছিলাম, একজন মুসলিম হিসেবে আমি বড় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। আমি চীনের চেংডু শহরের সাউথওয়েস্ট পেট্রোলিয়াম ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত আছি। চীনে আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে বসলে এই লেখা শেষ হবে না। তাই ওসব না লিখে, আমি আজকে লিখবো আমি একজন মুসলিম হিসেবে চীনে কেমন ছিলাম।
আমরা সকলেই জানি যে চীনের বেশিরভাগ মানুষের কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম নেই। সে জন্য ধর্মের প্রতি তাদের অনুরাগ একটু কম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান হ্যান্ডবুকে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে ক্যাম্পাসে দলবদ্ধভাবে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড করা নিষিদ্ধ, তবে স্ব স্ব মসজিদ, গির্জা বা মন্দিরে তা করতে কোনো আপত্তি নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে, আমরা প্রায় সকলেই নিজেদের রুমেই প্রার্থনা করেছি এবং আমরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। সৌভাগ্যক্রমে মসজিদ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশি দূরে নয়। তিন-সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে হবে। তবে অনেক শহরে বা অন্য ভার্সিটির ছাত্ররা অনেক দূরের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। মসজিদ কাছে হওয়ায় আমরা সবাই জুমার নামাজ পড়তে নিয়মিত মসজিদে যেতাম। মসজিদে যাওয়ার জন্য আমরা কখনো ইলেকট্রিক বাইক বা সাইকেল আবার কখনো ট্যাক্সি ভাড়া করতাম। আমরা যখন নামাজ পড়তে যাই তখন পাঞ্জাবি পরে থাকি। বাংলাদেশী, পাকিস্তানি, উজবেক এবং আফ্রিকান দেশ সহ অন্যান্য দেশের মুসলমানরা সবাই শুক্রবার একই সময়ে কমবেশি যান। মসজিদে যাওয়ার সময় খুবই সুন্দর একটি ভালো লাগা কাজ করে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষ অথচ সবাই মুসলমান। মনে হয় প্রতি শুক্রবারই ঈদের দিন। মসজিদের ইমাম সহ অন্যান্য মুসলিম চাইনিজরা আমাদের সহযোগিতা করেন। একজন বাঙালি বড় ভাই তো জুম্মার নামাজের একামাত দিতেন নিয়মিত। আমরা কোনো সমস্যা ছাড়াই নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়েছি। যেহেতু শুক্রবারে আমাদের বেশিরভাগের ক্লাস থাকতো, তাই আমাদের অনেকেই পাঞ্জাবি পড়ে ক্লাসে যেতাম। কোনো শিক্ষক এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
BCYSA.ORG
এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ
অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর
ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল :
news.bcysa@outlook.com।