চীনের গবেষণা বান্ধব পড়াশোনা এবং আমার মাস্টার্স এর প্রথম কনফারেন্স পেপার: কিছু কথা
আমি মোঃ সাকিব উল্লাহ সৌরভ, চীনের শেনদং প্রভিন্স এর শেনদং ইউনিভার্সিটি অব ফিনান্স অন্ড ইকনোমিকস (SDUFE) বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভিন্সিয়াল গভর্ণমেন্ট স্কলার্শিপ নিয়ে মাস্টার্স করছি ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর। আমার ক্লাস শুরু হয় ২০২০ এর সেপ্টেম্বর থেকে এবং এর ২ মাস পরই নভেম্বরে আমার সুপারভাইজারের সাথে আমার পরিচয় হয়। শুরু থেকেই এবং এখন পর্যন্ত উনি আমার প্রতি বেশ আন্তরিক, সহানুভূতিশীল এবং বন্ধুসুলভ আচরণ করছেন। আমার চীনে মাস্টার্স জীবনের একটি ঘটনা আজকে শেয়ার করতে চাচ্ছি আমার এই লিখার মাধ্যমে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে একটা ইন্টার্নেশনাল কনফারেন্সে (ICICIP 2021) আমার মাস্টার্স এর প্রথম পেপার বের হয়। এই পেপারটির কাজ মূলত আমি করি আমার সেকেন্ড সেমিস্টারের একটি কোর্স যেটির নাম “ম্যানেজমেন্ট এম্পিরিক্যাল রিসার্চ”, এই কোর্সের অধীন একটি টার্ম পেপারের উপর। এই কোর্সে আমাদের শেখানো হয় কিভাবে সার্ভের মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহ করে এসপিএসএস (SPSS) সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডাটা ম্যানিপুলেট করে একটি সিদ্ধান্ত দেখাতে হয়। আমার এই পেপারটির মূল কাজ ছিল কোভিডজনিত ডিপ্রেশন সমাধানে সোশ্যাল মিডিয়ার ইনফর্মেশন সোর্স হিসেবে কী ভূমিকা রয়েছে এবং এক্ষেত্রে আত্মকার্যকারিতার ভূমিকা কতটুকু? - তা নিয়ে একটা সম্পর্ক স্থাপন করা। টার্ম পেপার সাবমিট করার পর সেমিস্টার শেষে কোর্স ইন্সট্রাক্টর বেশ প্রশংসা করেন আমার পেপারটি এবং এর রেজাল্ট নিয়ে। তখন আমি চিন্তা করছিলাম, আমার কাজটা তো বেশ ভালো হয়েছে, এর উপর যদি একটি পেপার করা যায় তবে কেমন হয়? সুপারভাইজারের সাথে বিষয়টা শেয়ার করলাম এবং তিনি সাথে সাথেই আমাকে উৎসাহ দিলেন এবং একটি কনফারেন্সে পেপারটি সাবমিট করার জন্য গাইড লাইন দিলেন তৎক্ষণাৎ। ডেডলাইনের মাত্র তিনদিন আগে আমি পেপারটি সাবমিট করি এবং পরবর্তীতে ছয় মাসের একটা টাইম ফ্রেম শেষে পেপারটি আইট্রিপলই এক্সপ্লোর (IEEE Explore) এ পাবলিশ হয়। আমার সুপারভাইজার থেকে কথায় কথায় জানতে পারলাম আমার ইউনিভার্সিটিতে ইন্টার্নেশনাল স্টুডেন্সদের মধ্যে আমিই প্রথম যে কিনা কোন আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে রিসার্চ পেপার পাবলিশ করেছে! এখানে উল্লেখ্য, চীনে আমার ইউনিভার্সিটি (SDUFE) বেশ পুরনো এবং স্বনামধন্য হলেও এখানে ইন্টার্নেশনাল স্টুডেন্স নেয়া হচ্ছে ২০১৭ সাল থেকে, মূলত মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য। সেই হিসেবে আমি হচ্ছি চতুর্থ ব্যাচের স্টুডেন্ট। আমার প্রফেসর যখন ইউনিভার্সিটির লিডারের সাথে আমার কনফারেন্স রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে কথা বলতে যায়, তখন সে এই বিষয়টি অবগত হয় যে বিষয়টি আমার মাধ্যমে প্রথম হল। এখানে আরো একটি ব্যাপার বলাবাহুল্য। কনফারেন্স রেজিস্ট্রেশন ফি ছিল ৫০০ ডলার যা প্রায় বাংলাদেশি টাকায় ৫০ হাজার টাকার মত। তখন পর্যন্ত আমার এমন পূর্বধারণা ছিল না একটি কনফারেন্স পেপারের রেজিস্ট্রেশন ফি এত বেশি হতে পারে। যাই হোক, আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্টুডেন্টদের পেপার পাবলিকেশনের জন্য সাধারনত এত বেশি পরিমাণ টাকা স্পন্সর করতে দেখা যায় না। কারণ আমাদের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো সেভাবে গবেষণা বান্ধব হয়ে ওঠেনি! প্রাচীনকাল থেকে দেশ কাল ভেদে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার মুল ধারণাটি এসেছে একটি ভালো চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের স্থান হিসেবেই, তবে সময়ের সাথে সাথে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আধুনিকায়ন করেছে এবং পুঁথিগত পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণার চর্চাটাও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছে! তারই ফলশ্রুতিতে তারা উন্নত প্রযুক্তির ধারক ও কর্ণধার হয়েছে!
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।