চায়নাতে ল্যান্ড করার পর কি কি করবেন
১. Landed. বিমান থেকে নেমে ইমিগ্রেশন এর কাছাকাছি গিয়েই নিজের পাসপোর্ট স্ক্যান করবেন। আর টোকেন নিবেন। (অটোমেটেড মেশিন থাকে আর সাথে একজন গার্ড সেখানে থাকে)
২. Arrival Card. এরাইভাল কার্ড সাধারণত বিমানেই দিবে না দিলে ইমিগ্রেশনের কাছেই পাবেন। সেটা পূরণ করবেন। চায়নাতে ঠিকানা আর নাম্বার আপনার ইউনিভার্সিটির দিবেন।
৩. Immigration. ইমিগ্রেশন এ লাইনে দাঁড়াবেন। আপনার টার্ন আসলে যাবেন। আঙুলের ছাপ দিবেন, আর ছবি তুলবে আপনার। কোন ভার্সিটিতে যাচ্ছে না বা কোন মেজর বা কোনো ডকুমেন্টস দেখতে চাইলে দেখাবেন। সাধারণত দেখতে চায় না। যাস্ট জিজ্ঞেস করে। ঘাবড়াবেন না। এটা যাস্ট ইমিগ্রেশন চেক।
৪. Baggage Claim. ইমিগ্রেশন শেষ করে ব্যাগেজ ক্লেইম এ গিয়ে নিজের ফ্লাইটের ব্যাগেজ ক্যারোসোল সেই নাম্বার খুঁজে ওয়েট করবেন। আর নিজের ব্যাগেজ কালেক্ট করবেন। (যদি সেইম এয়ারলাইনস এ অন্য কোথাও কানেক্টিং ফ্লাইট না থাকে)
৫. Connecting Flight. ব্যাগেজ কালেক্ট করা শেষে যেকোনো এক্সিট দিয়ে বের হবেন। এক্ষেত্রে আপনার যদি আবার আরেকটা ফ্লাইট থাকে সেক্ষেত্রে ডোমেস্টিক ডিপারচারে যাবেন। যদি অন্য কোনো ফ্লাইট না থাকে তাহলে এক্সিট নিবেন। যদি আরেকটি ফ্লাইট থাকে আর যদি সেইম এয়ারলাইনস হয় তাইলে আপনাকে ঢাকা থেকেই দুইটি টিকেট দিবে আর ব্যাগেজ লাস্ট এয়ারপোর্টে কালেক্ট করতে হবে। সেক্ষত্রে টিকেট নিয়ে ডমেস্টিক সিকিউরিটি শেষ করে পরবর্তী ফ্লাইটের গেইট খুঁজে সেখানে ওয়েট করবেন। ট্রাঞ্জিট বেশি সময়ের হলে এয়ারপোর্টে ফ্রি ওয়াইফাই কানেক্টে করতে পারেন। তবে চায়নিজ নাম্বার দিয়ে কানেক্টে করতে হয়। তাই আমি রেকোমেন্ড করি দেশ থেকে ডেটা রোমিং কিনে নিয়ে যেতে। তাইলে ভিপিএনের ঝামেলা থাকে না। গ্রামীণফোনের ডেটা রোমিং ভালো।
৬. To the University. এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি, সাবওয়ে বা ভার্সিটির পিক আপ থাকলে সেভাবে ভার্সিটিতে যাবেন। এক্ষেত্রে নিজের কাছে ভার্সিটির চায়নিজ নাম মোবাইলে সেভ করে রাখবেন। মোবাইলে অফলাইন ট্রান্সলেটর ডাউনলোড করে রাখবেন।
৭. Registration. ভার্সিটিতে গিয়েই ইন্টারন্যাশনাল অফিসে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করবেন। ডর্মে চেক ইন করবেন। রেজিষ্ট্রেশন এর সময় আপনার সকল ডকুমেন্টস (Passport, Admission letter, JW, Medical Examination Certificate with reports, Non Criminal Certificate, SSC, HSC certificates and transcripts etc) এর অরিজিনাল কপি সাথে রাখবেন। ভার্সিটির স্টুডেন্ট আইডি কার্ড কালেক্ট করবেন। নতুন স্টুডেন্টদের জন্যে বা প্রতি ডিপার্টমেন্ট কিছু উইচ্যাট গ্রুপ থাকে সেগুলোতে অবশ্যই এড হয়ে নিবেন। রেজিষ্ট্রেশন এর সময় তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন ও তা ফলো করবেন। কিছু ইউনিভার্সিটিতে ডরমেটরির জন্য ডিপোজিট ফি দিতে হয় যদিও সেটা রিফান্ডেবল।
৮. Sim Card. ভার্সিটির কারো কাছে জিজ্ঞেস করে ডর্মে কোন সিম কোম্পানির নেটওয়ার্ক ভালো সেটা জেনে সিম কিনবেন। সেপ্টেম্বরে সাধারণত সব ভার্সিটিতেই সিম কোম্পানির বুথ থাকে আর স্টুডেন্ট প্যাকেজও। ৩০০-৬০০ আর এমবি মতো হতে পারে ১/২ বছরের জন্যে। এটা সিম কোম্পানি, প্যাকেজ, মেয়াদ ভেদে এদিক সেদিক হতে পারে। সিম কেনার সময় অবশ্যই আপনার নামের বানান পাসপোর্ট অনুযায়ী আছে কি না ডাবল চেক করে নিবেন।
৯. Police Registrations. এটি অনেক ভার্সিটিতে নিজেকে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে করতে হয় অনেক ভার্সিটিতে যেয়ে করতে হয় না। ভার্সিটিই করে দেয়। আপনার ভার্সিটি যেটা রেকোমেন্ড করে করবেন।
১০. Medical Examination. ভার্সিটি যেই ঠিকানা সাজেস্ট করবে সেখানে গিয়ে মেডিকেল টেস্ট করবেন। আগে থেকে যদি এপয়েন্টমেন্ট নিতে হয় সেটা নিয়ে নিবেন। দেশ থেকে নিজের মেডিকেল এক্সামিনেশন রিপোর্ট আর ফর্মসহ সব নিয়ে যাবেন। চায়নাতে প্রথম মেডিকেল টেস্ট ফ্রি। আপনার সব রিপোর্ট দেখালে যদি ওদের ভালো লাগে তাহলে নতুন করে করতে হবে না। আবার অনেকে ক্ষেত্রে করতে হতে পারে। ডিপেন্ড করছে। তবে প্রথমটা ফ্রি। এক্ষেত্রে রিপোর্ট ভার্সিটিতে পাঠাতে কুরিয়ার ফি ১০-৩০ আরএমবি লাগতে পারে। এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবিও তারা নিবে। ভার্সিটির ঠিকানা চায়নিজে ফোনে সেভ করে রাখবেন অনেক সময় নিজেকেই লিখতে হয়। ২/৩ দিন লাগে মেডিকেল রিপোর্ট পেতে। পাসপোর্ট , এডমিশন লেটার, JW এগুলো সাথে অবশ্যই রাখবেন।
১১. Residence Permit. মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেলে ভার্সিটি আপনাকে জানাবে ও রেসিডেন্স পারমিটের জন্যে আবেদন পত্র, টেম্পরারি রেজিষ্ট্রেশন ইত্যাদি রেডি করে দিবে। সেগুলো নিয়ে ভার্সিটির রেকোমেন্ডেড এক্সিট এন্ট্রি ব্যুরোতে যাবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিবেন। এপ্লিকেশন ফর্মে সাইন করবেন। সেখানে এপ্লিকেশন জমা দিবেন। ছবি তুলবেন। এখানেও পাসপোর্ট ও অন্যান্য ডকুমেন্টস সাথে রাখবেন। সব শেষে আপনার পাসপোর্ট ও বাকি ডকুমেন্টস জমা নিয়ে আপনাকে পাসপোর্ট কালেকশনের রিসিপ্ট দিবে। বের হওয়ার আগে রিসিপ্টে আপনার নামের বানান, পাসপোর্ট নাম্বার, বার্থ ডেথ ডাবল চেক করে নিবেন। সাধারণত ৭-১০ দিন সময় লাগে। পাসপোর্ট কালেকশনের সময় আপনাকে রেসিডেন্সি পারমিট ফি দিতে হবে। প্রোভিন্স, সময় ভেদে এটি ৪০০-৮০০ আরএমবি হতে পারে। ক্যাশ, আলি পে, উইচ্যাট পে তে তা দিতে পারবেন।
১২. Bank Account. রেসিডেন্স পারমিট পাওয়ার পর ভার্সিটির নিকটস্থ ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন। পাসপোর্ট, এডমিশন লেটার ও ১০ আরএমবি ক্যাশ সাথে রাখবেন।
১৩. Binding Bank Card to Alipay and WeChat. ব্যাংক কার্ড পাওয়ার পর সেটি নিজের উইচ্যাট একাউন্ট ও আলিপে তে বাইন্ড করবেন।
১৪. Campus card activation and WiFi. প্রতিটি ইউনিভার্সিটিতেই ক্যাম্পাস কার্ড দিয়ে ক্যানটিনে পে করা যায় সেটা এক্টিভেট করে নিবেন। সাথে ইউনিভার্সিটির ওয়াইফাই কিভাবে কানেক্টে করতে হয় জেনে নিবেন। এক্ষেত্রে ভার্সিটির টিচার ও ইন্টারন্যাশনাল অফিসের স্টাফরা সাহায্য করবে।
১৫. Course Selection and class schedule. প্রতি সেমিস্টারেই আপনাকে নিজের কোর্স সিলেক্ট করতে হবে। অনেক ভার্সিটিতে একবারে দুই সেমিস্টারের কোর্স সিলেক্ট করা যায়। এক্ষেত্রেও ভার্সিটির টিচার ও ইন্টারন্যাশনাল অফিসের স্টাফরা সাহায্য করবে। গ্রুপের নোটিশ গুলো ফলো করবেন।
ভিপিএন, কেনাকাটা, রান্না, খাবার সেগুলো নিজে ডর্মে উঠলেই জেনে যাবেন। নতুন ভার্সিটি নতুন জায়গা। সময়টি এঞ্জয় করবেন আর বেশি বেশি বন্ধু বানাবেন। আশাকরি একটি ভালো সময় কাটবে আপনার। শুভকামনা।
মঈন উদ্দিন হেলালী তৌহিদ
মাস্টার্স শিক্ষার্থী, চায়না ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম বেইজিং।
যুগ্ম সম্পাদক, বিসিওয়াইএসএ।
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।