
চাইনিজ নিউ ইয়ার ২০২৫

চাইনিজ নিউ ইয়ার বা চীনা নববর্ষ (Chinese New Year), যেটি চন্দ্র নববর্ষ (Lunar New Year) নামেও পরিচিত, চীনের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এটি চীনা চন্দ্র পঞ্জিকার ওপর ভিত্তি করে পালিত হয়। চীনা সংস্কৃতি অনুযায়ী, এটি নতুন বছর শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বসন্ত ঋতুর সূচনাও করে, তাই একে "স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল" (Spring Festival) বলা হয়। চীনা নববর্ষ জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পড়ে এবং তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়। জর্জিয়ান ক্যালেন্ডরের ২১ জানুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই নববর্ষ পালিত হয়। ২৯ জানুয়ারি অমাবস্যা তিথি বা নিউ মুন ডে। সেই অনুযায়ী এই দিন থেকেই শুরু হবে চিনা নতুন বছর। । চীনা নববর্ষ শুধু চীনে নয়, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীনা সম্প্রদায়ের মধ্যেও উদযাপিত হয়। এটি ঐক্য, আনন্দ এবং সৌভাগ্যের এক দুর্দান্ত উদাহরণ। চীনা নববর্ষের (Chinese New Year) মূল থিম হলো "পুনর্জন্ম, ঐক্য, সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্য।" এটি একটি সময় যখন মানুষ পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে সাদরে গ্রহণ করে। চীনা নববর্ষের থিম কয়েকটি মূল ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে| পুনর্জন্ম ও নতুন শুরু, পরিবারের ঐক্য, সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধি, শুভ কামনা ও মন্দ আত্মার বিদায়, চন্দ্র পঞ্জিকার পশু প্রতীক, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ এর মধ্যে অন্যতম| প্রতি বছর চীনা রাশিচক্রের (Zodiac) একটি পশু চিহ্ন থিম হিসেবে থাকে। এই চিনা নববর্ষটি সাপের বছর। এই রাশির জাতকরা একাধিক সুযোগের সদ্ব্যবহার করলে লাভবান হবেন। ধৈর্য ধরে কৌশলী পদক্ষেপের মাধ্যমে কাজ করলে সাফল্য নিশ্চিত এই রাশির জাতকদের। এ বছর ব্যক্তিগত উন্নতিও করতে পারবেন এঁরা। যা তাঁদের সাফল্যকে সুনিশ্চিত করবে। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও কৌশল বৃদ্ধি পাবে এই রাশির।
চীনা নববর্ষের (Chinese New Year) প্রতীক বা "Symbol" বিভিন্ন ঐতিহ্য, রঙ এবং চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। লাল রং অর্থ সৌভাগ্য, সুখ, এবং মন্দ শক্তি দূর করার প্রতীক। বিশ্বাস করা হয় যে লাল রং খারাপ শক্তি এবং দুর্ভাগ্যকে দূরে রাখে। ড্রাগন এবং সিংহ নাচ অর্থ মন্দ আত্মা তাড়ানো এবং সৌভাগ্য ডেকে আনার প্রতীক। লাল খাম (Red Envelope) অর্থ শুভেচ্ছা, আশীর্বাদ, এবং আর্থিক সমৃদ্ধি। বড়রা ছোটদের এবং আত্মীয়স্বজনকে টাকা উপহার দেন লাল খামের মাধ্যমে। চন্দ্র লণ্ঠন (Lanterns) অর্থ আশা, আলো, এবং শুভকামনার প্রতীক। নববর্ষের শেষ দিনে (ল্যান্টার্ন ফেস্টিভ্যাল) কাগজের লণ্ঠন জ্বালিয়ে আকাশে ছাড়া হয়। আতশবাজি এবং পটকা (Fireworks and Firecrackers) অর্থ খারাপ শক্তি দূর করা এবং নতুন বছরকে সাদরে গ্রহণ। পটকা এবং আতশবাজির শব্দে পুরোনো বছরের দুঃখকে বিদায় জানানো হয়। ঐতিহ্যবাহী খাবার (Traditional Food) প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়| যেমন, ডাম্পলিংস (Dumplings) ধন-সম্পদের প্রতীক, মাছ (Fish) সমৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত সাফল্য এবং রাইস কেক (Nian Gao) উচ্চতর সফলতার প্রতীক |
চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা নববর্ষ (Chinese New Year) বেশ ধুমধামের সঙ্গে উদযাপিত হয়। এটি আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় ছাত্রদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা এবং মজার সময়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের বিশেষ অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম আয়োজন করে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতি উপস্থাপন করা হয়। নববর্ষ উপলক্ষে ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী এবং কাগজ কাটার শিল্প শেখানো হয়। ছাত্ররা ‘福’ (Fu) চিহ্ন তৈরি করে, যা সৌভাগ্যের প্রতীক। আন্তর্জাতিক ছাত্রদের চীনা খাবারের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানানো হয় এবং কখনও কখনও তারা নিজেরা এই খাবার তৈরি করার সুযোগ পায়। থিম পার্টি বা কালচারাল নাইট আয়োজন করা হয়, যেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা চীনা পোশাক পরেন এবং স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করেন। ছাত্রদের অংশগ্রহণে মাল্টিকালচারাল শো করা হয়, যেখানে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি প্রদর্শিত হয়। ক্যাম্পাসগুলো সাজানো হয় লাল লণ্ঠন এবং রঙিন আলোকসজ্জায়। চীনা ঐতিহ্যবাহী পোশাক যেমন হানফু (Hanfu) এবং চীনা গাউন প্রদর্শিত হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাশন শো আয়োজন করে। চীনা নববর্ষের উদযাপন আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য চীনা সংস্কৃতি বোঝার একটি অসাধারণ সুযোগ। এটি ঐক্য, আনন্দ, এবং সৌভাগ্যের প্রতীক। আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বের বন্ধন শক্তিশালী করার একটি উপায়। বাংলাদেশেও সম্প্রতি চাইনিজ নিউ ইয়ার উদযাপিত হয়েছে আলোক উজ্জ্বলভাবে| 22 জানুয়ারী (সিনহুয়া)-মঙ্গলবার,বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় "শুভ চাইনিজ নববর্ষ" উ অপেরার বিশেষ পারফরম্যান্স প্রায় ৮00 জন দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে।
ইভেন্ট চলাকালীন, ঝেজিয়াং উ অপেরা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা উ অপেরা ক্লাসিকের অত্যাশ্চর্য পারফরমেন্স প্রদান করেছেন যেমন "দ্য সেলসিয়াল মেডেন স্ক্যাটারিং ফ্লাওয়ারস" এবং "মাঙ্কি কিং ফাইটস দ্য হোয়াইট বোন ডেমন।" বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে বসন্ত উৎসব চীনা জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উৎসব এবং এটি ইউনেস্কো কর্তৃক মানবতার অস্পষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধি তালিকার অংশ হিসেবে স্বীকৃত।সবার চাইনিজ নতুন বর্ষ আনন্দে কাটুক এই শুভকামনাই করছি|
Arif/Amirul
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।