৮০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পেলেন চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ
২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে চীনের সম্মানজনক সরকারি বৃত্তি ‘চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (CGS)’ অর্জন করেছেন বাংলাদেশের ৮০ জন মেধাবী শিক্ষার্থী। তাঁরা চীনের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ে সম্পূর্ণ সরকারি অনুদানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। এই বৃত্তির আওতায় তাদের টিউশন ফি, আবাসন, মাসিক ভাতা, স্বাস্থ্যবিমা ও যাতায়াতসহ সকল ব্যয়ভার বহন করবে চীনা সরকার।
চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার যাত্রা নতুন নয়। ১৯৮১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই বৃত্তি কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪,৫০০ শিক্ষার্থী চীনে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। তাঁদের অনেকেই দেশে ফিরে শিক্ষা, প্রযুক্তি ও গবেষণার নানা খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।
চীনের উন্নত গবেষণা কাঠামো, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা এবং বৈচিত্র্যময় একাডেমিক পরিবেশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, CGS কেবল একাডেমিক নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কও জোরদার করছে।
বিশ্বের উচ্চশিক্ষার মানদণ্ডে চীনের অগ্রগতি দৃশ্যমান। আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় হয়ে উঠছে দেশটির বহু বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদরা বলছেন, চীনের বর্তমান উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, গবেষণাভিত্তিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ। বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে প্রতিবছর চীন-সরকার বিভিন্ন ধরণের বৃত্তির সুযোগ দেয়, যার মধ্যে অন্যতম ‘চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ’।
চলতি বছরে এই স্কলারশিপের জন্য বাংলাদেশ থেকে আবেদন করেছিলেন পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ৮০ জন চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন। দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, নির্বাচিতদের মধ্যে রয়েছেন ১৮ জন স্নাতক, ৪০ জন স্নাতকোত্তর, ২১ জন পিএইচডি এবং ১ জন সিনিয়র স্কলার। বৃত্তিপ্রাপ্তদের প্রত্যেকেই টিউশন ফি, আবাসন, স্বাস্থ্যবিমা ও বিমান ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ পাবেন। পাশাপাশি মাসিক ভাতা হিসেবে দেওয়া হবে যথাক্রমে—স্নাতক পর্যায়ে ২,৫০০ ইউয়ান, স্নাতকোত্তরে ৩,০০০ ইউয়ান এবং পিএইচডিতে ৩,৫০০ ইউয়ান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তা মি. সান (Mr. Sun) বলেন, “চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ কর্মসূচি দুই দেশের জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া ও বন্ধুত্বকে আরও গভীর করেছে। চীন–বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আশাবাদী, এই বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে দুই দেশের উন্নয়ন ও সহযোগিতায় ইতিবাচক অবদান রাখবেন।”
এই বৃত্তি শুধু শিক্ষা নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে শিক্ষাবিনিময় ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগও বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়া প্রতিবছর ডিসেম্বরে শুরু হয় এবং মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। আগ্রহীরা CSC-এর ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করেন।
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেই চীনে যাত্রা করবেন। তাঁদের গন্তব্য হচ্ছে চীনের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ—পিকিং ইউনিভার্সিটি, সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি, সাংহাই জিয়াওটং ইউনিভার্সিটি, ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটিসহ আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পড়াশোনার বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, ব্যবসা ও চীনা ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি।
স্নাতক পর্যায়ে নির্বাচিত পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই বৃত্তি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগ। এটি আমার শিক্ষাজীবনকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।” Bangladesh-China Youth Student Association (BCYSA)-এর সভাপতি জান্নাতুল আরিফ বলেন, “চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশাল এক আশীর্বাদ। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং দুই দেশের বন্ধুত্ব ও শিক্ষাবিনিময়ের এক মজবুত সেতুবন্ধন।”
এছাড়াও চীনের বিভিন্ন প্রাদেশিক ও পৌর সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট থেকেও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নানান বৃত্তির সুযোগ। এই সবকিছু মিলিয়ে চীন এখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার একটি জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
Arif/Raoha
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।