একজন ‘নাইনাই’ এর গল্প
অজয় কান্তি মন্ডলঃ অনলাইন শপিং চীনাদের জনপ্রিয়
এবং স্বল্প সময়ে পণ্য ডেলিভারি পাওয়ার সর্বোত্তম পন্থা। যেখানে সার্বক্ষণিক নিশ্চিত করা হয় পণ্যের গুণগত মান। অনলাইনে পণ্য ক্রয় পরবর্তী ক্রেতাকে যথাসময়ে
ডেলিভারি দেওয়ার জন্য প্রতিটা কমিউনিটির আশপাশে বেশ কয়েকটি করে ডেলিভারি শপ আছে। পন্য
অর্ডার করার পর হতে মোবাইলের অ্যাপে সেটার ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালু আছে। এছাড়া কোন
পন্য পৌঁছানোর সাথে সাথে ক্রেতার মোবাইল নাম্বারে খুদে বার্তা চলে যায়। তারপর
ক্রেতারা গিয়ে নিজ দায়িত্বে নিজের পন্য খুঁজে নিয়ে আসে। ক্রেতাদের সহজে খুঁজে পেতে
কর্তৃপক্ষ পণ্যের প্যাকেটের গায়ে নাম্বারিং করে নির্দিষ্ট র্যাকে সাজিয়ে রাখে।
যেটা ক্রেতাদের চোখের নিমিষেই খুঁজে পেতে সাহায্য করে। ক্রেতারা নিজ দায়িত্বে
সাজানো র্যাক থেকে পন্য নেওয়ার পর দোকানে রাখা স্ক্যানারে পন্যের গায়ের কিউ আর
কোড/বার কোডটি স্ক্যান করে বাসায় নিয়ে যায়। কোডটি স্ক্যান করার সঙ্গে সঙ্গে
বিক্রেতা নিশ্চিত হয় যে, পন্য ক্রেতা ঠিকঠাক বুঝে পেয়েছে।
চীনাদের মত আমরাও আমাদের
দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় বেশীরভাগ জিনিসই অনলাইনে অর্ডার করি। প্রতিদিনই
কিছু না কিছু পণ্য অনলাইন পণ্যের ডেলিভারি শপ থেকে নিয়ে আসতে হয়। আমার মেয়ে ‘অন্তু’র প্রতিদিনের
আবদার থাকে তাকে সাথে নিয়েই যেন অনলাইনে ক্রয়কৃত পণ্যে নিয়ে আসি। ক্রয়কৃত পন্য
খুঁজে বের করে অন্তুর কাজ হল স্ক্যানারের নিচে রাখা। স্ক্যানারের নিচের নির্দিষ্ট স্থানে পন্যের বক্স রাখার পরেই স্ক্যানার
স্বয়ংক্রিয় ভাবে পণ্যের বাক্সের গায়ে লাগানো কিউ আর কোড/বার কোড ডিটেক্ট করে স্ক্যানারটি
চীনা ভাষায় রেকর্ড কৃত একটা কথা বলে। অন্তু এইটা শুনে খুব মজা পায়। এরপর পণ্যটা
নিয়ে বেরিয়ে আসার সময়ে গেটে অপেক্ষা করে নাইনাই। চীনা ভাষায় নাইনাই অর্থ ঠাম্মি বা
দাদী। চীনা এই নাইনাই কে নিয়েই আজকের লেখা।
নাইনাই এর বয়স আনুমানিক আশি
বছরের উপরেই হবে। বাহ্যিক অবলোকনে বোঝা গেলেও নাইনাই এর কাজকর্মে কেউ কখনো বুঝবে
না যে উনি এত বয়স্কা একজন মহিলা। সবাই উনাকে নাইনাই বলেই ডাকে। তাই আমিও নাইনাই
বলি আবার অন্তুও নাইনাই বলে। আমি যখন ভোরে হাঁটার জন্য বের হই মাঝে মধ্যে দেখি নাইনাই
তার সকালের হাঁটার কাজ সেরে কমিউনিটির গেটে বসে আছে। সন্ধ্যার পরে বাসায় ফেরার সময়
দেখি নাইনাই অন্যান্য বয়স্ক মানুষদের সাথে বসে গল্প করছে। খুবই প্রাণবন্ত আর মজার
এই নাইনাই। নাইনাই এর রেগুলার ডিউটি অনলাইনের পণ্য ডেলিভারির দোকান খোলার সাথে
সাথেই সেখানে হাজির হওয়া এবং বন্ধের আগ পর্যন্ত সেখানে থাকা। এরপর যারা পণ্য নিয়ে
যায় তারা পণ্যের বক্সগুলো নাইনাই থেকে খুলে নেই। নাইনাই সেগুলো ছুরির সাহায্যে পরম
যতনে খুলে বক্সটা নিজের কাছে রেখে পণ্যগুলো ক্রেতার কাছে দিয়ে দেয়। সবাই
স্বঃপ্রনোদিত হয়ে নাইনাই কে দিয়েই বক্স গুলো খুলে নেই। এতে করে নাইনাই একটু লাভবান
হয়। বক্সগুলোর কাগজ বিক্রি করে নাইনাই কিছু টাকা পায়।
BCYSA.ORG
এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ
অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর
ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল :
news.bcysa@outlook.com।