ইয়াংঝও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অসামান্য সাফল্য
২১শে সেপ্টেম্বর, ইয়াংঝও ইউনিভার্সিটি আয়োজিত "5th China-Foreign Student Science and Technology Innovation Competition" সফলভাবে হেহুয়াচি ক্যাম্পাসের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলার মাল্টি-ফাংশনাল হলে অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতার অন্যতম আকর্ষণ ছিল ইয়াংঝও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অসাধারণ সাফল্য, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও সুসংহত করেছে।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান জেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের প্রতি তাদের উৎসাহের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী মনোভাব ধরে রাখার আহ্বান জানান এবং নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর জন্য আত্মবিশ্বাসী হতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, “ছাত্রদের শেখার সুযোগগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং অজানা ক্ষেত্রগুলোতে সাহসী হয়ে অভিযান চালাতে হবে। দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের পথে একসাথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।" অনুষ্ঠানে স্কুল অফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহযোগী অধ্যাপক ঝাং কুই এবং পিক্সিস এশিয়া প্যাসিফিকের সিইও ড. ঝো হুয়া বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তারা যথাক্রমে "বেল্ট অ্যান্ড রোড: গ্লোবাল কোঅপারেশন এর উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা" এবং "মাল্টিন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজে উদ্ভাবনের মডেল ও বাস্তবতা" শীর্ষক বক্তৃতা দেন।
প্রতিযোগিতায় চারটি মূল থিমের ওপর ভিত্তি করে উপ-ট্র্যাক ছিল: Modern Agriculture, Healthcare and Medical Technology, Green Energy & Intelligent Materials, এবং Digital Economy & Tech-Powered Civilization Synergy। প্রতিযোগিতায় ইয়াংঝও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি নানজিং এরোনটিক্স এবং অ্যাস্ট্রোনটিক্স বিশ্ববিদ্যালয়, নানজিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জিয়াংসু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ও বিদেশি শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অর্জন:
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলো সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রাওহা বিন মেজবা এবং তার দল "EcoHusk" Modern Agriculture এর ওপর ভিত্তি করে তাদের অসাধারণ উদ্ভাবনী প্রকল্পের জন্য "সেরা দল" পুরস্কার অর্জন করে। অন্যদিকে, রাফিদ মুস্তাভী এবং তার দল "Data Elites" প্রযুক্তিগত সৃজনশীলতার জন্য একই পুরস্কার লাভ করে। তাদের অসাধারণ প্রচেষ্টার ফলাফল হিসেবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সাফল্য প্রতিযোগিতার প্রতিটি পর্যায়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
এছাড়াও, পার্থ শুভ সরকার তার চমৎকার সমস্যার সমাধান এবং যৌক্তিক উপস্থাপনার জন্য "সেরা বক্তা" হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। তার এই অর্জন বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী দক্ষতা ও প্রতিভা দিয়ে প্রতিযোগিতার বিচারক ও উপস্থিত সকলের মন জয় করে নিয়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিচারক প্যানেল বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। বিজয়ী দলের সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন, বিশেষ করে রাওহা বিন মেজবা, রশিদ ওয়াকাস এবং রাফিদ মুস্তাভী তাদের সফলতার গল্প শোনান। বিচারক প্যানেলের প্রধান এবং ইয়াংঝও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্কুলের সেক্রেটারি ইয়াও শিয়াওকুন বিজয়ীদের হাতে ট্রফি এবং সনদপত্র তুলে দেন।
এই প্রতিযোগিতা শুধু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্ভাবনী মনোভাব গড়ে তুলতেই সাহায্য করেনি, বরং "শেখা অবশ্যই প্রয়োগের জন্য, আর প্রয়োগ অবশ্যই সঠিক স্থানে হতে হবে"—এই চিন্তাধারার সফল বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অসামান্য সাফল্য এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক ছিল, যা বাংলাদেশের উদ্ভাবনী সক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের মর্যাদা আরও সুসংহত করেছে।
লেখক:
মোঃ তালাত মাহমুদ তমাল
ইয়াংঝও ইউনিভার্সিটি, BCYSA ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর
Arif
BCYSA.ORG এর নিউজ-এ আপনিও লিখতে পারেন। গণচীনে প্রবাস জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবরাখবর, আনন্দ-বেদনার গল্প, স্মৃতিচারণ, ভ্রমণ, অনুভূতি, বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর ছবিসহ আমাদের (বাংলা অথবা ইংরেজিতে) পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ইমেইল : news.bcysa@outlook.com।